মাদারীপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নিহত ১

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ত্রিমুখী হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  এ সময লেকের পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্য, ২ সংবাদকর্মীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ জন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালান। পাল্টা হামলা চালিয়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে শেখ হাসিনা মহাসড়কের ডিসি ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে শকুনি লেকপাড়, পুলিশ সুপারের বাসভবন, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনেও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষ চলায় মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।

হামলার পর পর পালাতে গিয়ে ঘটনাস্থলে শকুনি লেকে পড়ে যায় অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে আজ সাড়ে তিনটা পর্যন্ত একজনের কোনো খোঁজ মেলেনি। জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা শেখ আহাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লেকের পানি থেকে উদ্ধার করা মরদেহটি দীপ্ত দে (২১) নামের এক শিক্ষার্থীর। তিনি জেলা শহরের আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা ও মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাদারীপুরের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সহপাঠীরা।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে মাদারীপুর সরকারি কলেজ, চরমুগরিয়া কলেজ, ইউনাইটেড সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ইউআই স্কুল মাঠে জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শেখ হাসিনা মহাসড়কের ডিসি ব্রিজ এলাকায় জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বেলা ১১টার দিকে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। অন্যদিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরাও তাঁদের লক্ষ্য করে হামলা চালান।

এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। ডিসি ব্রিজ থেকে পুরোনো কোর্ট পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এ সময় পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে থাকা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ৪০টি রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এতে পুলিশের অন্তত ১০ জন সদস্য, ২ জন সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত ৭০ জন। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিসি ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ চলছে।

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা লেকের পানি থেকে একজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছি। এখনো নিখোঁজ একজনের সন্ধানে ডুবুরিরা কাজ করছেন।’

মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহামুদ বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালে ৭০ জনের মত চিকিৎসা নিয়েছে। একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার লাশ মর্গে আছে। আহতদের মধ্যে ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোগীর চাপ বেশি থাকায় আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

এসব বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, ‘সরকারি জানমাল ও সাধারণ মানুষকে রক্ষার্থে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। শর্টগান ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’

চাটগাঁ নিউজ/এআইকে

Scroll to Top