উজ্জ্বল দত্ত: ব্যক্তি মালিকাধীন জমি থেকে মাটি উত্তোলন করার ক্ষেত্রে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি সাপেক্ষে কোন ব্যক্তি সীমিত পরিসরে শর্ত মেনে বালু বা মাটি উত্তোলন করতে পারবেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই সরকারের এই আইন সম্পর্কে অবগত নয়।
সচেতনতার অভাবে সরকারি অনুমতি না নিয়ে অনেকে নিজের জমি থেকে বালু,মাটি উত্তোলন করতে গিয়ে ফেঁসে যাচ্ছে আইনে। বেআইনি ভাবে বালু বা মাটি উত্তোলন করার দায়ে গুণতে হচ্ছে অর্থদন্ড। আইন সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে সাধারণ মানুষ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, আবার দিন দিন আবাদি জমি অনাবাদী জমিতে পরিণত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন, যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বেআইনি ভাবে পাহাড়,নদী,কৃষিজমির মাটি কেটে পাচার করছে, তারা অবশ্যই অপরাধী। তবে শুষ্ক মৌসুমে গ্রামে-গঞ্জে অনেকেই বসত বাড়ি নির্মাণ বা স্বীয় প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকাধীন জমি থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করে থাকে। কিন্তু এর জন্য যে আইন আছে, অনুমতির ব্যাপার আছে তা জানে না অনেকে। জনসাধারণের উচিত প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে এসব বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করা।
জানা গেছে, বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম সারোয়াতলীতে কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটায় শামসুল হুদা চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিমাদ্রী খীসা।
অভিযানের ব্যাপারে হিমাদ্রী খীসা জানান, কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার দায়ে শামসুল হুদা চৌধুরী নামের এক ব্যক্তিকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে, একই দিন বিকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে ফসলি জমির টপসয়েল কাটার দায়ে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল সিকদারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজান হোসাইন জানিয়েছেন, উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া এলাকায় স্কেভেটর দিয়ে গুমাইবিলের টপ সয়েল কেটে অন্যত্র পাচার করে আসছিল একটি প্রভাবশালী চক্র। একাধিক ট্রাক যোগে গ্রামীণ সড়ক হয়ে মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে রাস্তাঘাটেরও ক্ষতি হচ্ছিলো। অভিযানে অর্থদন্ড দেয়া হয় এবং মাটি কাটা বন্ধ করেন। জমির টপসয়েল কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আইনে কি আছে:
বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২৩ ৭ক অনুযায়ী- `কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হইতে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না, যদি- ক) উহা উর্বর কৃষি জমি হয়; খ)বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হয়; গ) কৃষি জমির উর্বর উপরিভাগের মাটি বিনষ্ট হয়; ঘ) পরিবেশ, প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধিত হয়; ঙ) ড্রেজারের মাধ্যমে বা অন্য কোনো কৌশলী প্রক্রিয়ায় বালু বা মাটি উত্তোলন করা হয়, যাহাতে উক্ত জমিসহ পার্শ্ববর্তী অন্য জমির ক্ষতি, চ্যুতি বা ধসের উদ্ভব হয়:
তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তি তাহার বসত বাড়ি নির্মাণ বা স্বীয় প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতিক্রমে নিজ মালিকানাধীন ভূমি হইতে সীমিত পরিসরে বালু বা মাটি উত্তোলন করিতে পারিবেন।’
এই ব্যাপারে বোয়ালখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কানিজ ফাতেমা চাটগাঁ নিউজকে বলেন, মাটি পাচারকারী বা মাটি কাটা চক্রের হাত থেকে কৃষি জমি বাঁচাতে সরকার বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করেছে। কেউ জমি কেটে পুকুর করছে, কেউ জমি ভরাট করে বানাচ্ছে ভবন, টার্ফ, আবার কেউ ব্যবসায়ীর কাছে নিজের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। কৃষিজমি থেকে মাটির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে দিন দিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। এতে করে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমাদের কৃষি জমি ও কৃষিজাত পণ্যের যোগান দিনদিন কমে যাচ্ছে। যেমন- বোয়ালখালী উপজেলায় পাহাড় ও সমতল ভূমি মিলিয়ে প্রচুর জমি আছে। কিন্তু এখানে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত চাল আসছে উত্তরবঙ্গ বা ভারত থেকে, সবজি আসছে দোহাজারী,সাতকানিয়া থেকে।
তিনি আরও বলেন, মাটি কাটতে হলে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এখনো মানুষের মাঝে সে সচেতনতা আসেনি। বলতে গেলে অনেকে অবগতও নন সরকারি অনুমতির বিষয়টি নিয়ে। আমরা বর্তমানে সরব হয়েছি। আমরা খবর পেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আছে কিনা পরীক্ষা করছি। তারপর সচেতন করা হচ্ছে। মাটিকাটার দায়ে অর্থদন্ড করার একটা ইতিবাচক কারণ রয়েছে। সেটি হচ্ছে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। যাতে এ সম্পর্কে মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠে।
জানা গেছে, বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম সারোয়াতলীতে কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটায় শামসুল হুদা চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিমাদ্রী খীসা।
অভিযানের ব্যাপারে হিমাদ্রী খীসা জানান, কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার দায়ে শামসুল হুদা চৌধুরী নামের এক ব্যক্তিকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে, একই দিন বিকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে ফসলি জমির টপসয়েল কাটার দায়ে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল সিকদারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজান হোসাইন জানিয়েছেন, উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া এলাকায় স্কেভেটর দিয়ে গুমাইবিলের টপ সয়েল কেটে অন্যত্র পাচার করে আসছিল একটি প্রভাবশালী চক্র। একাধিক ট্রাক যোগে গ্রামীণ সড়ক হয়ে মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে রাস্তাঘাটেরও ক্ষতি হচ্ছিলো। খবর পেয়ে উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিযান চালিয়ে অর্থদন্ড দেয়া হয় এবং মাটি কাটা বন্ধ করেন। জমির টপসয়েল কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চাটগাঁ নিউজ