মহাসড়ক দশ লেইনে উন্নীতকরণে সীতাকুণ্ডবাসীর স্মারকলিপি

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি:  ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেইট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ক দশ লেইনে উন্নীত করণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যাতে মূল সড়ক হবে ৬ লেইনের, ২ পাশে ২ লেইন করে ৪টি সার্ভিস লেইন থাকবে। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দশ লেইন করা হলে সীতাকুণ্ডবাসী যেমন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি সরকারের ব্যয় বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। এমতাবস্থায় দু্ইটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্বারকলিপি দিয়েছেন।

২৭ জানুয়ারি সোমবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা আখতারের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ এর সদস্য সচিব মাস্টার আবুল কাশেম। এ সময় সীতাকুণ্ড সমাজ কল্যাণ ফেডারেশন এর সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন, সীতাকুণ্ড সমিতির সহ-সভাপতি ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার আবুল হাসনাত, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ মোঃ ফোরকান আবু ও সীতাকুণ্ড সমিতি-চট্টগ্রাম এর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সিপ্লাস টিভি ও দৈনিক ভোরের দর্পণের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি কামরুল ইসলাম দুলু উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপিতে নাগরিক সমাজ’র পক্ষ থেকে দুইটি বিকল্প প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এক: দশ লেন মহাসড়কের বিকল্প হিসাবে ফৌজদারহাট (ডিসি পার্ক) হতে মীরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত বেড়ি বাঁধের উপর মেরিন ড্রাইভ সড়ক চার লেনে উন্নীত করা।

উল্লেখ্য যে, টেকনাফ হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯৮ কি.মি. এবং আনোয়ারা হতে কর্ণফুলী টানেল হয়ে ফৌজদারহাট ডিসি পার্ক পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এর ফলে কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার শতভাগে উন্নীত হবে এবং রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধিপাবে। এছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়ক বেড়িবাঁধ হিসাবে সীতাকুণ্ড-মীরসরাইবাসীকে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, সুনামী হতে রক্ষা করবে।

অন্যদিকে, বড় কুমিরা ঘাট হতে সীতাকুণ্ডের উত্তরাংশ উত্তর বগাচতর পর্যন্ত উপকূলীয় বেড়ি বাঁধের উভয় পাশে অধিগ্রহণ কৃত সরকারী খাস জমি রয়েছে। ফলে উপকূলী সড়ক নির্মাণে সরকারের জমি অধিগ্রহণ খরচ অনেক কমে যাবে এবং ওই উপকূলীয় এলাকায় পর্যটনসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সম্ভাবনা তৈরী হবে।

স্মারকলিপিতে দ্বিতীয় প্রস্তাব হিসেবে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের (সীতাকুণ্ড অংশে সীতাকুণ্ড পৌরসভা হতে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত) ২৫ কি.মি চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রস্তাব করা হয়। এলাকাবাসী ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে আন্ডারপাস, ওভারপাস এবং সার্ভিস সড়ক করা হলে আগামী ২০/৩০ বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উল্লিখিত অংশে স্থানীয় মানুষের যাতায়াত সমস্যা যেমন নিরসন হবে তেমনী উচ্ছেদ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে শত শত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। বিশেষ করে সীতাকুণ্ড পৌরসদর হতে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড-মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। সীতাকুণ্ডে রয়েছে ছোট-বড়-মাঝারি দুইশতাধিক শিল্পকারখানা, ১২৬টি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প ও ১৫টি এলপিজি গ্যাস কারখানা, দেশের প্রথম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ একাডেমী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ), নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী ক্যাম্প, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। সীতাকুণ্ড মুসলিম, সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপত্যের জন্যও বিখ্যাতস্থান। সরকার ঘোষিত পর্যটন এলাকা গুলিয়াখালী বীচ ছাড়াও চন্দ্রনাথ মন্দির, দেশের প্রথম সীতাকুণ্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক, সহস্রধারা-সুপ্তধারা ঝর্ণা, বাঁশবাড়িয়া ও আকিলপুর সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হয় এখানে। এখানে রয়েছে ৪৫১টি মসজিদ, ৫০টি মন্দির, ৪টি বৌদ্ধ মঠ, ১৫টি মাজার। মহাসড়ক ১০ লেইনে উন্নীত হলে এই এলাকার বহু সরকারি স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, হাসপাতাল, হাট-বাজার, বাড়ি-ঘর, মসজিদ-মন্দির, কবরস্থান, শ্মশান, পেট্টোলপাম্প, সিএনজি স্টেশন সহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা- প্রতিষ্ঠান চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে। এ ছাড়াও মহাসড়কের দুই পাশে থাকা হাজার হাজার বিরল প্রজাতির বৃক্ষ এবং জীববৈচিত্র্য অধিগ্রহণের মধ্যে পড়বে। এর জন্য সরকারকে বিপুল অংকের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি

 

Scroll to Top