নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য দুই মাস বাংলার মধু মাস। এ দুই মাসে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, জামরুল, জাম, কচি তালসহ রকমারি মধুফল মেলে। মধুফলের ভরা এ মৌসুমে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ফল বাগান ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। মধুফলে চট্টগ্রাম নগরীর বাজারগুলো সয়লাব। তবে সরবরাহে যেমন বাজার ভরা, দামেও বাজার একেবারে চড়া। মধুফলের বাহার দেখে জিভে জল এলেও দাম দেখে ক্রেতারা অল্পতে সন্তুষ্ট থাকছেন।
নগরীর বিআরটিসি কদমতলী ফলমন্ডি, ফিরিঙ্গিবাজার ফলের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, আম, লিচু, আনারস, কাঁঠালের সরবরাহে বাজার ভর্তি। এর পাশাপাশি সাদা জামরুল, লাল জামরুল, জাম, আনারসের সরবরাহও রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকারের ফল ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে। আমের মধ্যে সাতক্ষীরা, রাঙ্গামাটিসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন পাহাড়ি বাগান থেকে আম আসছে বাজারে। আকার ও গুণগত মান অনুযায়ী পাইকারিতে কেজিপ্রতি ৪০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আম। তবে ফলমন্ডিতে এখনো রাজশাহীর লিচু আসেনি। বর্তমানে পাবনার লিচুর সরবরাহ বেশি। প্রতিবছর এমন সময়ে বাজারে আগাম বাঁশখালীর লিচু আসলেও এবার কিন্তু তা হয়নি। বর্তমানে চট্টগ্রামে পাবনার লিচুর সরবরাহ বেশি। তবে পাবনা ও বাঁশখালীর লিচু আকারে ছোট এবং তুলনামূলক টক। বাঁশখালী-পাবনার লিচু পাইকারিতে একশ’প্রতি ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঁঠাল আসছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এলাকা থেকে। তবে সাইজের তুলনায় কাঁঠালের দাম বেশি। ছোট সাইজ (৩/৫ কেজি) পাইকারিতে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পাইকারি বাজার থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল কিনে খুচরা বাজারগুলোতে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন। বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, আন্দরকিল্লা, জিইসি, কোতোয়ালি মোড়, জামালখানসহ অলিগলির বাজারেও বিক্রেতারা কেউ ভ্যানগাড়ি, কেউ বা কাঁছি নিয়ে মধুফল বিক্রি করছেন। তবে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামের ফারাক বেশ লক্ষ্যণীয়। পাইকারিতে যে আম ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরায় তা চলছে ৮০-৯০ টাকায়। আবার বড় সাইজের ভাল জাতের আম পাইকারি বাজারে ৭০-৮০ টাকা কেজি। অথচ সেই আম স্থানভেদে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা দরে। অন্যান্য ফলের ক্ষেত্রেও এমন অতিমূল্য লক্ষ্য করা গেছে। ১৫০ টাকা দামের লিচু খুচরায় ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বহদ্দারহাট মোড়ের ফল ব্যবসায়ী জয়নাল হোসেন বলেন, ব্যবসা গরি ভাত খন পরের বাজি। নইলে ফল ব্যবসাত এখন আর পরতায় ন পোষার। এক হাঁছি আম আনিলে ৭/৮ কেজি নষ্ট হয়। কেজিয়ে ১০/২০ টেঁয়া তুলতে কষ্ট হই যারগুই। তার উদ্দি আছে পথর চাঁদা, নিজের পকেট খরচ। যাই থুইয়ারে কুম লই ঘরত যাইত ন পারির। এবছর ত আঁরার অবস্থা আরও খারাপ। ফুটপাত ভাঙ্গি নালার কাজ গরের। বইবার জা’গা নাই। কোনরকমে রাস্তাত বইয়েনে টুকটাক ব্যবসা গরির দি।
তবে দামের এমন ফারাক নিয়ে কদমতলী ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আম, লিচু এসব কাঁচামাল। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকার থেকে কিনে বিক্রি করে। কিছু ফল নষ্ট হয়। আবার ক্রেতারা কেনার সময় সাধারণত বেছে বেছে ক্রয় করেন। এতে করে ভালগুলো আগে বিক্রি হয়ে যায়। আর কম গুণগত মানের ফলগুলো রয়ে যায়। যেগুলো কম দামেই তাদেরকে বিক্রি করতে হয়। সব মিলিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদেরকে পরতা হিসাব করে ফল বিক্রি করতে হয়।
নগরীর কদমতলী সিএনজি পেট্রোলপাম্প এলাকায় কচি তালের মজুত চোখে পড়ার মত। তবে পাইকারি পর্যায়েও দাম একটু বেশি। প্রতিশ’ কচি তাল ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তালের পাইকারি ব্যবসায়ী মোসলেম মিয়া জানান, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁচা তাল চট্টগ্রামে আসে। মাত্র আসতে শুরু করেছে। তাই দাম একটু বেশি। বেশ দামেই তাল কিনতে হচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়তি বাজারে। গাছ থেকে তাল কাটা, সেগুলো গাড়িতে তোলা, গাড়ি ভাড়াসহ নানা খরচ রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে ছোট সাইজের কচি তাল প্রতি জোড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়।
বাজারে খুচরা পর্যায়ে সাদা জামরুল কেজি ১২০ টাকা, লাল জামরুল ১৬০ টাকা, জাম কেজি প্রতি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফলের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ২০০-২৫০ গ্রাম কিনে সন্তুষ্ট থাকছেন।
চকবাজার থানার সামনের রাস্তা থেকে আম কিনে বাসায় যাচ্ছেন কর্মজীবী পুলক চৌধুরী। তিনি বলেন, ১০০ টাকার নিচে কোন আম নাই বাজারে। একটু ভাল বড় সাইজের আম কেজি ১৫০ টাকা। এ সিজনে দুই/তিনবার আমি আম কিনেছি। প্রথম প্রথম আমগুলো বাইরে রঙিন দেখালেও স্বাদে একেবারে টক ও কাঁচা। মনে হয় এগুলো ক্যামিকেল দিয়ে পাকাইছে। তবে গত পরশু ১৫০ টাকা করে যে আমগুলো নিয়েছি সেগুলো আবার বেশ মিষ্টি। মানুষ আম কিনছে তবে প্রয়োজনের তুলনায় অল্প কিনছে। হয়ত সামনে দাম আরও কমবে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ