মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে তার পরিবার, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মুরিদান, ভক্ত, রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করছে।

ভাসানী ফাউন্ডেশন ও খোদা-ই-খেদমতগারের উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী ‘ভাসানী মেলা’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে নানা জায়গায় তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। বিএনপির উদ্যোগে গঠিত ‘মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি’ দুই দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ তারা টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভা করবে।

এছাড়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি টাঙ্গাইল শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘গণঅভ্যুত্থান-২৪ পরবর্তী সময় বাংলাদেশে মওলানা ভাসানীর প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। মাজার প্রাঙ্গণে চলমান সাত দিনব্যাপী মেলায় দেশজ পণ্যের স্টল ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন দর্শকদের মন জয় করছে।

মওলানা ভাসানী তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার রক্ষায় আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের সয়া-ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ভাসানী ১৯০৩ সালে বিপ্লবী চেতনার সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯০৭ সালে ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্যে দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

১৯২৩ সালে ‘স্বরাজ্য পার্টি’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯২৬ সালে আসামে কৃষক-প্রজা আন্দোলন শুরু করেন। ১৯২৯ সালে ধুবড়ীর ভাসান চরে কৃষক সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ‘ভাসানী’ উপাধি তাঁর নামে যুক্ত হয়। দীর্ঘদিন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনে অগ্রণী ভূমিকা এবং ১৯৫৭ সালের ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর ‘খামোশ’ উচ্চারণ রাজনৈতিক ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিনি।

তার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তিনি দেশব্যাপী ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে পরিচিতি পান। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেকে কয়েক দিন আগে থেকেই সন্তোষে অবস্থান নেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মন্তব্য করেছেন, অসহায় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী সব সময় আমাদের প্রেরণার উত্স হয়ে থাকবেন। রবিবার নিজ ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তিনি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম। সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই প্রবাদপুরুষ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আপসহীন ও সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মওলানা ভাসানীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলা ইতিহাস কখনো ক্ষমা করবে না। তারা ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দাবি জানান।

ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তারা বলেন, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার দাবি মওলানা ভাসানী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রথমে সামনে এনেছেন। তার নেতৃত্বেই পূর্ববাংলার মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি শক্তভাবে তুলে ধরে, যা পরবর্তী কালে স্বাধীনতার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছে।

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন

Scroll to Top