ভোগান্তির আরেক নাম চমেক হাসপাতাল, চিকিৎসা পেতে ব্যয় ৪ ঘণ্টা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: মূত্রথলির মাংস বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ফেনীর বাসিন্দা ৬৪ বছর বয়সী রুহুল আমিন। ভালো চিকিৎসার আশায় গত ৬ মার্চ ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৬নং ওয়ার্ডে। কিন্তু চিকিৎসা পেতে তার পার হয়ে যায় প্রায় ৪ ঘণ্টারও অধিক সময়। আর পদে পদে ভোগান্তি হয়েছে তার নিত্যসঙ্গী।

চিকিৎসা নিতে এসে সাক্ষী হলেন সেবার অপ্রতুলতা ও নানান দুর্ভোগের। আর এটাই যেন বাস্তব চিত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। যা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভালো চিকিৎসার আকাঙ্ক্ষায় প্রায় মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের অধিকাংশের ভরসাস্থল সরকারী এই চিকিৎসালয়ে আসেন নিজেদের রোগ সারাতে। এসেই এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে ছুটাছুটি করতে দেখা যায় অনেক রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের। ইমার্জেন্সীতে আসা রোগীদের প্রয়োজনীয় ফরমালিটি শেষ করতেই লেগে যায় ১ ঘণ্টারও বেশি সময়। সেই সাথে নার্স, আয়া-বুয়াদের বকশিশ উৎপাততো আছেই। ৫০০ টাকা দিলে মিলে সীট নাহয় চিকিৎসা নিতে হবে মেঝেতে। যেখানে চিকিৎসা শুরু করতেই কেটে যায় আরও দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।

রুহুল আমিনের নাতি জাহেদুল ইসলাম বলেন, এখানে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। রোগীকে মেডিকেলে আনার পর থেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেতে সবাইকে শুধু ঘুষ দিতে হচ্ছে।

তার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে ‘চাটগাঁ নিউজ’কে জানান— মূত্রথলির মাংস বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত তার দাদু রুহুল আমিন। উন্নত চিকিৎসার আশায় চট্টগ্রামে আসেন তারা। উঠেন এক আত্মীয়ের বাসায়। কথা ছিল রাতটা থেকে সকালেই যাবেন ডাক্তারের কাছে। তবে রাত পোহানোর আগেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে রুহুল আমিনের। সময়টা তখন ভোর সাড়ে চারটার একটু বেশি। সেহেরির উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান রুহুল আমিনের অবস্থা বেশ জটিল। উপায় না দেখে সরাসরি নিয়ে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে।

ভোর সাড়ে ছয়টার কিছু সময় পর মেডিকেলের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে পৌঁছান তারা। ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হওয়ার পর তাকে বলা হয় দ্রুত পাঁচ তলায় ইউরিন বিভাগে যেতে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পরও অপেক্ষা করতে হয় ৩০ মিনিটেরও বেশি সময়। ডাক্তার এসে তাকে আবার পাঠান মেডিসিন বিভাগে। ততক্ষনে রোগীর প্রায় বেহুশ অবস্থা। অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে আবারো রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় নীচ তলার ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের পাশে মেডিসিন বিভাগে। তবে সেই বিভাগেও ঠাঁই হলো না রুহুল আমিনের। তখনো ব্যথায় ছটফট করছিলেন রুহুল আমিন।

ডাক্তার রোগীর কাগজ-পত্র চেক করে সর্বশেষ তাকে পাঠান তিন তলার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ততক্ষণে ঘড়ির কাটায় সাড়ে ৮টা। তিন তলার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে এবার তোড়ঝোড় শুরু হয় একটি সীট ম্যানেজ করার। ওয়ার্ড বয়কে ৫০০ টাকা ঘুষ দিয়ে একটি সিট ম্যানেজ করতে পারলেও তখনো চিকিৎসা সেবা পাননি রুহুল আমিন।

রুহুল আমিনের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে, কিন্তু চিকিৎসকের খোঁজ নেই। রোগীর আত্মীয়রা বেশ কয়েকবার কর্তব্যরত নার্সদের কাছে গিয়েও পাননি কোন ধরণের সহায়তা। তখনও রোগী ব্যথায় ছটফট করছিলেন।অবশেষে প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর সকাল ১০টার দিকে ডাক্তারের দেখা পান তারা।

অন্য এক রোগীর আত্মীয় মারুফ আহমেদ বলেন, এখানে ডাক্তারের চাইতে আয়া-বুয়া ও নার্সদের ক্ষমতা বেশি। তারা রোগীদের মানুষ মনে করেনা। রোগীদের জন্য এখানে কোনো মানবিকতা নেই।

রুহুল আমিনের এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা শুধু তার একার নয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হাজারো মানুষ প্রতিদিনই পড়ছেন এমন দুর্ভোগে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন ‘চাটগাঁ নিউজ’কে বলেন— আমাদের চিকিৎসার মান খারাপ নয়, তবে জনবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চাইতে রোগীর সংখ্যা সবসময় বেশি থাকে।

তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, জনবল সংকট মোকাবিলায় কাজ চলছে এবং ধীরে ধীরে সকল সমস্যার সমাধান হবে। এখানকার রোগীরা আরো ভালো সেবা পাবেন।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/জেএইচ

Scroll to Top