‘ভুয়া’ আলু রপ্তানি—হাতিয়ে নিল ৩০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আলু রপ্তানি না করে জাল নথিপত্র জমা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে সাড়ে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অন্তরা করপোরেশন। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৫ হাজার ৫৮৮ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করার হিসাব দেয়। কিন্তু তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি একটি আলুও রপ্তানি করেনি বলে প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।

জানা গেছে, ঢাকা মতিঝিলের অন্তরা করপোরেশন নামে রপ্তানি প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে ২০২০ সালে আলু রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে ছিল। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৫৮৮ মেট্রিক টন আলু রপ্তানির কথা বলে সরকারের কাছ থেকে সাড়ে সাত কোটি টাকা নগদ সহায়তা নেয়।

অন্তরা করপোরেশনের মতো ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস জানতে পেরেছে, এসব প্রতিষ্ঠান ৪২২টি চালানে ১ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলারের (প্রায় ১৬৪ কোটি টাকা) আলু রপ্তানি দেখিয়েছে, যা পুরোটাই ছিল ‘গায়েবি’। কোনো রপ্তানি না করেই তারা সরকারের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকার বেশি নগদ সহায়তা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে।

‘গায়েবি’ আলু রপ্তানির বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে। দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আরও ৪৮টির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো তদন্ত শেষ হলে আরও জালিয়াতি ও আরও বিপুল অর্থ আত্মসাতের তথ্য বেরিয়ে আসবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী জানান, কাস্টমসের ২০টি দল জালিয়াতি নিয়ে তদন্ত করছে। যে কয়েকটির তদন্ত শেষ হয়েছে, সেসব রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের আলু রপ্তানিতে জালিয়াতির তদন্ত ওঠে এসেছে আশ্চর্যজনক নানা ঘটনা। যেমন ‘গায়েবি’ রপ্তানি তথ্যভান্ডারে দেখাতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের পরিচয় (আইডি ও পাসওয়ার্ড) ব্যবহার করেছে জালিয়াত চক্র। ব্যবহার করা হয়েছে মৃত মানুষের সইও।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তদন্তে যেসব ‘ভুয়া’ রপ্তানি শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগের গন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে সংযুক্ত আরব-আমিরাত ও মালয়েশিয়া। যেমন ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘ভুয়া’ রপ্তানির ৬৪ শতাংশ আলুর গন্তব্য দেখানো হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। প্রায় ২৫ শতাংশের গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়া।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাচার করা অর্থের নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাই।

জানা গেছে, অপ্রচলিত বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে সরকার নগদ সহায়তা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৩টি পণ্য নগদ সহায়তা পাচ্ছে। সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাওয়া পণ্যের একটি আলু। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান ১০০ টাকার আলু রপ্তানি করলে ২০ টাকা সরকার ভর্তুকি দেয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৫ কোটি ৮ লাখ ডলারের আলু রপ্তানি হয়, যা তখনকার মূল্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৩৭ কোটি টাকার সমান।

আলুর আগে মুড়ি, সুপারি, মসলা, তৈলবীজসহ বিভিন্ন পণ্যের ‘ভুয়া’ রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। সরকার নানা পণ্যে বছরের পর বছর নগদ সহায়তা দিয়ে গেলেও রপ্তানি আয় খুব একটা বাড়ছে না। বরং জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top