নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তার ওপর দেশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিদেশের মাটিতে প্রবাসীদের মিছিল করার ঘটনায় আরব আমিরাতের ভিসাও বন্ধ। আবার মালয়েশিয়া প্রতিশ্রুতি দিলেও জনশক্তি আমদানি নিয়ে তাদের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ এখনো নেই। এমন অবস্থায় শ্রম ভিসা বন্ধ থাকায় পুরোপুরি চাপটি পড়ছে শ্রম ও জনশক্তি সম্পর্কিত সেক্টরগুলোতে। যেমন ভিসা বন্ধ থাকায় লাখো যুবশক্তি বিদেশে যেতে পারছে না। এতে করে দেশে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। আবার ভিসা বন্ধ থাকায় জনশক্তি রপ্তানিতে জড়িত ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসাও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ থাকায় বিদেশের শ্রম বাজার দখল করে নিচ্ছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, চায়না, নেপালের মত দেশ। এর ফলে কমতে শুরু করেছে রেমিটেন্স আয়।
সচেতন মহল মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস যদি তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশের শ্রম বাজার চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেন, তবেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
বিদেশের ভিসা বন্ধ থাকায় দেশে বেড়ে চলেছে বেকারত্ব সমস্যা। ২০২৩ সালে দেশে গড় বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। বর্তমানে সে সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। ভিসা বন্ধ থাকলে বেকারত্বের এই সংখ্যা আশঙ্কাজনক আকার ধারণ করবে। যুবশক্তির বেকারত্বের কারণে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে এ রহমান গ্রুপের চেয়ারম্যান কোরবান আলী সিআইপি চাটগাঁ নিউজকে বলেন, ভিসা বন্ধ থাকার ফলে শ্রমিক আসতে পারছে না। আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। ব্যবসা না হলে রেমিটেন্স পাঠাবো কি করে?
বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি ব্যবসায় যুক্ত আল রেজা হজ্ব কাফেলা এন্ড ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, অবস্থা একেবারে নাজুক। ভিসা বন্ধ থাকায় অনেকেই বিদেশ যেতে চাইলেইও আর যেতে পারছে না। এতে করে চাপ পড়ছে আমাদের ব্যবসায়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের কাছে আবেদন জানাই।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক সিপ্লাস টিভির এডিটর ইন চিফ আলমগীর অপু বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর আরব আমিরাতের ভিসা বন্ধের পাশাপাশি ভারতের ভিসাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আগমনে দেশের মানুষ মনে করেছিল আমেরিকা বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। সেক্ষেত্রে তারা অন্তত ডিভি লটারি কার্যক্রম পুনরায় চালু করে তাহলে তা বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর হতো। এই লটারি কর্মসূচি তো আমেরিকা আগেও বাস্তবায়ন করেছে। তাছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের শেখদের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারেন। আমার মনে হয়, তার মত ব্যক্তিত্বকে মধ্যপ্রাচ্যের শেখরা গুরুত্ব দেবেন।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, চলতি বছর ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবে ১৩ হাজার ৫২৩ জন, ওমানে ৩১ জন, আরব আমিরাতে ৫ হাজার ৬৬১ জন, কাতার ৬৩৯ জন, জর্দান ৩৮ জন, কুয়েত ৯৮৮ জন, লেবাননে ৩৪ জন, হংকংয়ে ৩ জন ও অন্যান্য দেশে ১ হাজার ৪৮ জনসহ মোট ২৭ হাজার ৭২৩ জনশক্তি বিদেশে গেছেন।
২০২৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবে গেছেন ২১ হাজার ৭১৮ জন, ওমানে ১৯ হাজার ৮৭০, আবুধাবিতে ১৩ হাজার ৫০০, কাতারে ৭ হাজার ৩১, জর্দানে ৩২, কুয়েতে ৮৬১, লেবাননে ২২ জন শ্রমিক। অপরদিকে ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল সৌদি আরবে ১৮ হাজার ৯২৩, ওমানে ৩১ হাজার ৫৭৭, আবুধাবিতে ১২ হাজার ৮৪১, কাতারে ৩ হাজার ৫৬১, জর্দানে ১৬, কুয়েতে ৭০৮ জন শ্রমিক গিয়েছে।
অপরদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকাল জুলাই এবং আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৮৩৬ জন। জুলাই মাসে সৌদি আরবে ১ হাজার ৬৬৭ জন, ওমানে শূন্য, আবুধাবিতে ৫৯৩ জন, কাতারে ৪৭৩, জর্দানে ২, কুয়েতে ১১৭ ও লেবাননে ৪ জন গেছেন। আগস্ট মাসে সৌদি আরবে গেছেন ১ হাজার ৫৩ জন, ওমানে শূন্য, আবুধাবিতে ৯৭৮, কাতারে ৬২২, জর্দানে ৫ জন, কুয়েতে ১৪১ জন শ্রমিক। তবে এবছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে চট্টগ্রাম থেকেই ৩৩ হাজার ৯১৫ জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমা বলেন, জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার এমন চিত্র চট্টগ্রামের পাশাপাশি সারা দেশেই হতাশাব্যঞ্জক। কাতার অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাছাড়া সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফরে আসলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস মহোদয়কে ১৮ হাজার শ্রমিক ভিসা পারমিটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি করতে না পারলে আমাদের রেমিটেন্স কমে যাবে। এর সাথে আরো সমূহ খাত ক্ষতির মুখে পড়বে।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ