চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ভিন্নরুপে মাঝখানে থেকে খেলাধুলা করে লাভ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচার থাকতে পারবে না। দেশে এখন গণতন্ত্রের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনী হাওয়া বইছে। এগুলো ঠেকিয়ে আবার বহুরুপে, ভিন্নরুপে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকার পায়চারি করলে প্রতিহত করা হবে।’
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকালে নগরীর মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড রোডে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সদরঘাট থানা বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র চলছে, মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, ‘আগে থেকে বলে দিচ্ছি— বড় বড় স্বৈরাচারকে দেশের মানুষ বিতাড়িত করেছে। ওই প্রক্রিয়ায়, ভিন্নরুপ-বহুরুপের ভাব দিয়ে আর কোনো স্বৈরাচারকে থাকতে দেব না। ভোট দিতে হবে, নির্বাচন দিতেই হবে; দেশের মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
মাঝখানে কেউ এসে খেলাধুলা করলে লাভ হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে মাঝখানে কেউ এসে খেলাধুলা করবেন, ভোট পিছিয়ে দিবেন, বিলম্বিত করবেন; তা হবে না। অন্য ষড়যন্ত্র করলে ওই শেখ হাসিনা একভাবে স্বৈরাচার, আপনারা অন্যভাবে স্বৈরাচার হবেন। এসব করে লাভ নেই। তাই আগে থেকে জনগণের দেয়াললিখন পড়তে শিখুন। শেখ হাসিনা জনগণের দেয়াললিখন পড়তে পারেনি। তাই তার এই করুণ দশা!’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকারের অপেক্ষায় আছে জনগণ।’
‘জীবনের নিরাপত্তা চায় দেশের মানুষ। কিছু মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কোনপথে যাবে। সেটা কি জনগণ গ্রহণ করবে? যত সংস্কার প্রয়োজন, তত সংস্কার হবে দেশের সংসদে ইনশাআল্লাহ। সব সংস্কার আমাদের ৩১ দফার মধ্যে আছে। এর বাইরেও যদি সংস্কার থাকে; জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে সংস্কার করবো
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল— সে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ছিল না, জবাবদিহি ছিল না। কারণ, সে অনির্বাচিত, দখলদার, স্বৈরাচার। বাংলাদেশে আমরা আর কোনোদিন কাউকে দখল করতে দিব না। আর কোনো স্বৈরাচারকে ক্ষমতা দখল করে থাকতে দিব না। স্বৈরাচার বহুরুপের আছে। স্বৈরাচারের রুপ কিন্তু অনেক রকম। অনেকে জনগণের ভোট নিয়ে স্বৈরাচার হয়ে যায়। অনেকে দেশের মানুষের কথা বলে স্বৈরাচার হয়ে যায়। অনেকে আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে স্বৈরাচার হয়ে যায়।’
সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিনিয়ত সংস্কার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্কারের আর দোহায় দিয়েন না, শুধু নির্বাচনের সংস্কার করতে হবে।’
সরকার পতনের সময় শ্রমিকরা ভূমিকা রাখায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে খসরু বলেন, ‘শ্রমিক ভাইয়েরা শেখ হাসিনার পতনের জন্য রাস্তায় লড়াই করেছেন। আপনাদের আমি সম্মান জানাই, ধন্যবাদ জানাই।’
শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘আপনাদের (শ্রমিক) অনেক সমস্যা আছে। গভীরভাবে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে কাজ চলছে। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের সঙ্গে আমরা বসবো। কথা বলে সব সমস্যা সমাধান করবো। বিএনপির ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবে আপনাদের সমস্যার কথা বলা হয়েছে। সমাধানের কথাও আছে।’
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকা শহরের চারদিক থেকে যখন মিছিল আসতো; এই মিছিলের অগ্রভাগে ছিল শ্রমিকের মিছিল। এই মিছিল দেখেই শেখ হাসিনা লক্ষণ সেনের মত পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ জিয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ খাল খনন কর্মসূচি আমরা চট্টগ্রামে শুরু করেছি। ইতিমধ্যে চাক্তাই খালসহ বহু খাল খনন করেছি। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য সদরঘাট এলাকার গুলজার খাল ও বালির মাঠ সংস্কার করা হবে। ৪১ ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করে দেব। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য প্রচুর ফান্ড আছে। সব রাস্তা সংস্কার করে দেবো, ইনশাআল্লাহ।’
বিশেষ অতিথি নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘চট্টগ্রামে গণআন্দোলনে নিউমার্কেট মোড়ে শ্রমিকরা অগ্রভাগে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যখন সমাবেশে হামলা করে; তখন এই শ্রমিক ভাইয়েরা ছাত্র জনতার সাথে মিলে তাদেরকে প্রতিহত করেছিলেন। অনেক রক্ত ঝরেছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু কেউ রাস্তা ছেড়ে দেননি।’
সদরঘাট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নগর বিএনপির সদস্য মো. সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বয়ক এস এম সাইফুল, বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ বাহার, আব্দুল হালিম শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, জয়নাল আবেদীন জিয়া, মশিউল আলম স্বপন প্রমুখ।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ