নিজস্ব প্রতিবেদক : শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারের নেয়া এমন সিদ্ধান্ত ঘিরে পক্ষে বিপক্ষে সরগরম স্যোশাল মিডিয়া।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে সমালোচনা মুখর ছিলেন যারা, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বর্তমানে সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করছেন। তাছাড়া বর্তমান সরকারও মৌসুমের শুরু থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির ঘোর বিরোধী আচরণে ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের ইলিশ রপ্তানির স্ববিরোধী সিদ্ধান্তে স্যোশাল এক্টিভিটসদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের সমালোচনায় রীতিমতো টর্নেডো বইয়ে দিচ্ছে।
স্যোশাল মিডিয়া পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর ব্যক্তিগত ভেরিফাইড পেজে লিখেছেন, ‘বিপুল পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানি করে তাদের কেন খুশি করা হচ্ছে? সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ মেরে ফেলার জন্য? অভিন্ন নদীর পানি থেকে আমাদের বঞ্চিত করার জন্য? বাণিজ্য ভারসাম্য না রাখার জন্য? কথায় কথায় বাংলাদেশ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য?
এবার ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে সেই ড. আসিফ নজরুলের কেমন ভূমিকা ছিল তা নিয়ে এক্টিভিটসরা প্রশ্ন তুলেছেন।
সাইদুল আলম নামের এক এক্টিভিটিস তার পোস্টে লিখেছেন – ‘এটা আবার কি? এবার কি প্রতিবাদ হবে না? দেশের মানুষ ইলিশ খাবে না?’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্যারিফাইড ফেজবুক পেজে বিষয়টি নিয়ে একটা খোঁচা মারা পোস্ট শেয়ার হয়েছে। যেখানে লেখা হয় – ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে সস্তা রাজনীতি ভারত বিরোধীতা। সেই সস্তা রাজনীতির ফাঁদে পড়েছে বাংলাদেশের মানুষ। ওইদিকে ২৬ লক্ষ ভারতীয় চাকরিজীবীর তালিকা এখনও পাওয়া গেল না। ৫০০ নয়, ১০০০ নয় পুরো ৩ হাজার টন ইলিশ দিয়ে দিলো ভারতকে। এখন লং মার্চ কোনদিকে হবে?
এম এ আবদুল হাই রুবেল তার পেজে লিখেছেন, ‘পূজা উপলক্ষে গতবছর ইন্ডিয়াতে ইলিশ দেয়া হয়েছিল ১ হাজার ৩০০ টন। এবার ইলিশ যাচ্ছে ৩ হাজার টন। ডাবলের চেয়ে বেশি। কথা ছিল এবার ইন্ডিয়াকে এক কেজি ইলিশও দেয় হবে না।’
তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ভারত প্রীতি নাকি উদার নীতি তা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। খোদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আকতার বলেছিলেন, ‘আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না? এটি দামী মাছ। আমরা দেখেছি আমাদের দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারেন না। কারন সব ভারতে পাঠানো হয়। যেগুলো থাকে সেগুলো অনেক দামে খেতে হয়। আমরাও দুর্গোৎসব পালন করি। আমাদের জনগণ ইলিশ খেতে পারবে।
এ নিয়ে বাসু দেব নামের এক ফেসবুক এক্টিভিটস তাঁর কমেন্টে লিখেছেন, ‘আমার তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছ প্রিয়। ইলিশের খবর আমরা রাখি না।’
সাংবাদিক আল আমিন সিকদার নামের এক এক্টিভিটিস লিখেছেন আরো একহাত বাড়িয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘মেরেছ কলসির কানা তা বলে কি প্রেম দেব না? যত ঝড় তুফান আসুক চিরদিনই তুমি যে আমার, ভারত থাকলে ঠান্ডা, হাতে থাকবে ক্ষমতার ডান্ডা।’
তবে ইলিশ রপ্তানির পক্ষেও কেউ কেউ ফেসবুকে দু-চার কলম লিখেছেন। যেখানে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ভঙ্গুর পরিস্থিতি উত্তোরণে এবং রপ্তানি আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এটি সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মত দিয়েছেন।
এদিকে আজ সকাল থেকে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে স্যোশাল মিডিয়া সরগরম থাকলেও সরকারের দিক থেকে এখনও পুরোপুরি বিষয়টি খোলাসা করা হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে বিষয়টি কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। তবে কী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ভারতের প্রতি নতজানু হয়ে গেলো! এমনটি অভিমত সাধারণ মানুষের।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/জেএইচ