নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা খরচ করে বাস্তবায়ন করা চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি শোধনাগার প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। ১৬ মার্চ চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডকে (সিইউএফএল) পানি সরবরাহের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। তবে সিইউএফএল এবং সংলগ্ন একটি শিল্প কারখানায় মিলিয়ে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে প্রকল্পের পানি। যেসব গ্রাহকদেরকে পানি দেবে বলে ওয়াসা এ প্রকল্পটি করেছে এখনো তিন চতুর্থাংশ গ্রাহকের কাছে পাইপলাইনই পৌঁছায়নি। যে কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ শুরুর আনুষ্ঠানিকতাকে ‘ঘোড়া কেনার আগে চাবুক কেনা’র সঙ্গে তুলনা করছেন সচেতনমহল।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি করা হয়েছে বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, কোরিয়ান ইপিজেড ও সরকারি ও বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি সরবরাহের জন্য। তবে ওয়াসার টার্গেট মোতাবেক ১৩টি বাণিজ্যিক গ্রাহকের মধ্যে মাত্র দুটি শিল্পকারখানা এবং হাজারের কাছাকাছি আবাসিক গ্রাহককে সংযোগ দিতে পেরেছে ওয়াসা। সংযোগ দিতে বাকি এখনো ১১টি বাণিজ্যিক গ্রাহক।
অন্যদিকে, ১৫ হাজারের মধ্যে ১৪ হাজার আবাসিক গ্রাহকের কাছেও সংযোগ যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ৬ কোটি লিটার পানি ফিল্টারিংয়ের প্রস্তুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রকল্পটি বর্তমানে পানি উৎপাদন করছে মাত্র দেড় কোটি লিটার।
জানা গেছে, ওয়াসা যেসব গ্রাহকদেরকে ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে সুপেয় পানি নেয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল তাদের মধ্যে কাফকো এবং ড্যাপ (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা) ছাড়া অন্যদের সাড়া নেই।
গ্রাহকরা মনে করছে, পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে পাইপলাইন স্থাপন জরুরি।
পানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওয়াসাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। ‘সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় পাইপলাইন স্থাপন চেয়ে এ চিঠিটি পাঠানো হয়। চলতি বছর গত ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে সিডিএর চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম এ চিঠি পাঠিয়েছেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আলম বলেন, ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার থেকে ইতোমধ্যে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। বর্তমানে দেড় কোটি লিটার পানি উৎপাদন চলমান রয়েছে। পটিয়া ইন্দ্রপুলসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় আমাদের নির্মিত ট্যাংকগুলো এখন রেডি। পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করতে হচ্ছে। লাইন সংযোগ সম্পন্ন হলেই পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের কাছে পানি সরবরাহ শুরু হবে। গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। উৎপাদিত পানির ৮০ শতাংশ কমার্শিয়াল এবং ২০ শতাংশ রেসিডেন্সিয়াল গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে একনেকে ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তীতে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার, ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক এবং ২০ কোটি টাকা চট্টগ্রাম ওয়াসার নিজস্ব তহবিল থেকে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ