আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনদিনের ব্যবধানে আবারো উঠল বাংলাদেশ পরিস্থিতি। দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ড. রুপা হক বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে পার্লামেন্টে প্রশ্ন তুলেছেন।
বৃহস্পতিবার তিনি পার্লামেন্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান জানতে চান। রুপা হক বলেন, ‘বাংলাদেশে যা চলছে, তা নিয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় রোম, প্যারিস, ম্যানচেস্টার, লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে বিক্ষোভ হয়েছে। বাংলাদেশে তিন সংখ্যার ছাত্র ও বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার কারণে আমরা সঠিক সংখ্যাটি জানি না।’
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কি এ বিষয়ে আমাদের (যুক্তরাজ্য সরকার) অবস্থান সম্পর্কে একটি জরুরি সরকারি বিবৃতি দিতে পারি? এসব পরিস্থিতিতে আমাদের একটি ঐতিহাসিক ও অনন্য ভূমিকা রয়েছে।’
জবাবে পার্লামেন্টে সরকারের মুখপাত্র পাওয়েল এমপি বলেন, ‘রুপা হক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন।’ তিনি আগেই বলেছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় সহিংসতার বিষয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। প্রাণহানি অগ্রহণযোগ্য। প্রতিবাদ করার অধিকার ও ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ ব্যাপারে তারা সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রীরা এসব হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইবেন। সাপ্তাহিক ছুটির আগে এ গুরুত্বপূর্ণ হালনাগাদ তথ্যগুলো যাতে আনা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সব সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় ২২ জুলাই যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউজ অব কমনসে ‘আর্লি ডে মোশন’ উত্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশী অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার ও লাইম হাউজ আসনের এমপি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আপসানা বেগম এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
‘আর্লি ডে মোশন’ একটি নির্দিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে পার্লামেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হাউজ অব কমনসের সদস্যরা ব্যবহার করেন। অন্য এমপিরা তাদের স্বাক্ষর যোগ করে উত্থাপিত মোশনের প্রতি নিজেদের সমর্থন দেখাতে পারেন। তবে মোশনে উত্থাপিত ঘটনা হাউজ অব কমনসে আলোচনায় উঠতে পারে, আবার নাও উঠতে পারে। ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ’ শিরোনামে উত্থাপন করা ওই মোশনে স্বতন্ত্র এমপি ও সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিনসহ ২২ জন এমপি স্বাক্ষর করেছেন।
মোশনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ হাউজ শঙ্কিত। কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক ছাত্র নিহত বা আহত হওয়ার জন্য বিশেষভাবে আতঙ্কিত। কোটা পদ্ধতির বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের ছাত্র ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি যে তাদের প্রতি সহিংসতা, বেআইনি হত্যা, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া এবং অন্যান্য ধরনের দমন-পীড়ন অগ্রহণযোগ্য এবং বাংলাদেশের মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি সম্পর্কে আমরা উদ্বিগ্ন।’ মোশনে প্রতিবাদ করার অধিকার, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেকোনো কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য অবিচ্ছেদ্য এবং মৌলিক অধিকার বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া একই দিন যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিসের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি ক্যাথেরিন ওয়েস্ট বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যে সহিংসতা আমরা দেখেছি, তা নিয়ে যুক্তরাজ্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যেখানে শতাধিক মানুষ নিহত ও সহস্রাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মানুষের প্রাণহানি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারীদের সহিংসতার শিকার হওয়া উচিত নয়।’
প্রতিবাদ করা, শান্তিপূর্ণভাবে একত্র হওয়া ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করতে পারার অধিকার যুক্তরাজ্যের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এসব অধিকার অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। ইন্টারনেট ও যোগাযোগ পরিষেবা যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে আনতে হবে, যাতে বাংলাদেশের মানুষ যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা তাদের বন্ধু ও পরিবারবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।’
তারও আগে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে ১৮ জুলাই যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছিল।
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে