নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজার থেকে সয়াবিনের বোতল ‘গায়েব’ করে দিয়ে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। তারপর ‘গায়েব’ সেই তেল আবার বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সোমবার তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই ডুমুরের ফুল হয়ে যাওয়া এই সয়াবিন তেল উঁকি মারতে শুরু করেছে দোকানে দোকানে। বলতে গেলে বাজারে এখন আর বোতলজাত সয়াবিনের কোন অভাব নেই। তবে ক্রেতাদেরকে গুনতে বাড়তি টাকা।
ভোক্তাদের অভিযোগ, এমনিতেই কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে এই কয়দিনে ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার ওপর মূল্যবৃদ্ধির হিড়িকে কম দামে কেনা ‘গায়েব হওয়া’ তেল বাজারে ছেড়ে ব্যবসায়ীরা এখন লাভের উপর লাভ করেছেন।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। ফলে এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৫৭ টাকা, যা আগে ছিল ১৪৯ টাকা। একই সঙ্গে বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৫২ টাকা। এতদিন পাঁচ লিটার বোতল ছিল ৮১৮ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৭ টাকা।
এই ঘোষণার সাথে সাথেই নগরীর দোকানে দোকানে সয়াবিন বোতলের পসরা সাজাতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। যে ব্যবসায়ীরা এতদিন ধরে সয়াবিন নিয়ে নানা কারসাজি, নানা টালবাহানায় ভোক্তাদের পকেট কেটেছেন। সরকারের মূল্যবৃদ্ধি ঘোষণার সাথে সাথে তেলের এত সরবরাহ কিভাবে হলো- সেটাই এখন জনসাধারণের প্রশ্ন।
এ বিষয়ে নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের চৌধুরী স্টোর্সের মালিক মো. তালেব উদ্দিনের সাথে চাটগাঁ নিউজ প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্বাভাবিক ভাবেই তেলের প্রচুর চাহিদা ছিল। কিন্তু কোনো কোম্পানির কাছে তো তেল ছিল না। আমরা অর্ডার দিয়েও তেল কিনতে পারিনি। আমি এক সপ্তাহ আগে অর্ডার দিয়ে আজকে চালান পেয়েছি মাত্র। তাও অর্ডার মোতাবেক চালান পাইনি। কিছুদিন আগে ব্যাংক থেকে নিজের জমানো টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকদের যে ‘মরি মরি’ অবস্থা হয়েছিল। তেলের বাজারেও আমাদেরকে একই অবস্থা ফেস করতে হয়েছে। টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তেল পাচ্ছি কিনা জানি না।
তেল পাওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে কেনই বা পাইকারদেরকে টাকা দিয়েছেন? প্রশ্ন করা হলে জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান দোকানদার।
এমন ‘সয়াবিন কাণ্ড’ নিয়ে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশে তেলের পর্যাপ্ত মজুত ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ‘সরবরাহে সংকট’কে প্রশ্রয় দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা পরোক্ষভাবে তাদের কারসাজিকেই উসকে দিয়েছেন। ভোক্তা সাধারণকে জিম্মি করে পকেট কাটার সংস্কৃতি আমাদের দীর্ঘদিনের। এবারও রায় গেল ব্যবসায়ীদের পক্ষে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে মানুষ মারার কারসাজি এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তেল কেন? কখনো চাল, কখনো চিনি, কখনো আলু, কখনো পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি চলছেই।
এদিকে, সোমবার ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে চারটি জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার এমটি আরডমোর শায়ানি ও এমটি ডাম্বলডোর নামে দুই জাহাজে বন্দরে আনা হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন তেল। মঙ্গলবার বন্দর জলসীমায় পৌঁছেছে এমটি সানি ভিক্টরি ও এমটি জিঙ্গা থ্রেশার নামের আরও দুটি জাহাজ। এই দুই জাহাজে রয়েছে ৩০ হাজার ৬০০ টন সয়াবিন তেল। এর মধ্যে এমটি আরডমোর শায়ানি জাহাজ থেকে তেল খালাস শেষ হয়েছে। সোমবারই জাহাজটি বন্দর ছেড়েছে। জাহাজগুলোর মধ্যে সানি ভিক্টরি এসেছে ব্রাজিল থেকে, বাকি তিনটি আর্জেন্টিনা।
সূত্র জানিয়েছে, এই চার জাহাজে সয়াবিন তেল আমদানি করেছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই ও টিকে গ্রুপ। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপের ২০ হাজার টন ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ হাজার টন সয়াবিন তেল রয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ