বৈষম্যের ভাঙনে নগরে দিনভর ভোগান্তি, হেনস্তার শিকার সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল সমন্বয়ক ও সাধারণ ছাত্ররা। ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই কমিটি থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। ফলে শুরু হওয়ার আগেই ভাঙনের সুর বেজে উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে।

এরই জের ধরে দিনভর রাস্তা আটকিয়ে জনদুর্ভোগ চরমে তুলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ সমর্থিত একটি পক্ষ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের হরতালের বিরুদ্ধে ও সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে র‌্যালী করেছে খান তালাত মাহমুদ রাফি সমর্থিত অন্য গ্রুপটি।

এর আগে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ সময় তারা এই তিন কমিটিকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এছাড়াও দাবি তোলেন কমিটি বাতিলের, দেন কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি। যার নেতৃত্বে ছিলেন রাসেল আহমদ ও জোবায়েরুল আলম।

এর পরপরই তারা মিছিল সহকারে নগরীর লালখান বাজার মোড়ে এসে অবস্থান নেন। এসময় ব্যস্ত সড়ক অবরোধ করে তারা বক্তব্য দিতে থাকেন। অন্যদিকে, একই সময়ে নগরীর ২নং গেটে হরতাল বিরোধী সমাবেশ করেন অন্যপক্ষ। পরে তারা মিছিল সহকারে লালখানবাজার যেতে চাইলে পুলিশ ওয়াসা মোড় দিয়ে তাদের কাজির দেউরি পাঠিয়ে দেয়। তারাও কাজির দেউরির মোড়ে রাস্তা আটকিয়ে সমাবেশ করলে চট্টগ্রাম শহর পরিণত হয় জনদুর্ভোগের নগরীতে।

আর এই জনদূর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে লাইভ করার সময় একজন সাংবাদিককে হেনস্তা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা।

সরেজমিনে নগরীর লালখান বাজার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক সাধারণ ছাত্র মোড় দখল করে বসে আছে। টেনে দেওয়া হয়েছে ব্যারিকেড। দীর্ঘ জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা সধারণ মানুষ। অনেকেই জ্যামে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে গাড়ি ছেড়ে হাঁটা শুরু করেন গন্তব্যে।

এ সময় হেঁটে যাওয়া ইফতু নামের একজন পথচারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চার ঘন্টা ধরে জ্যামে আটকে আছি, এখন না পারতে হাঁটা শুরু করেছি।

মুখে বিরক্তির রেশ টেনে তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও একজন ছাত্র, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আমিও একজন যোদ্ধা। তবে পদ-পদবির লোভে আমি আন্দোলনে যাইনি।

মিজানুর রহমান নামের একজন চাকরিজীবী বলেন, সারাদিনের অফিস শেষে রাস্তায় নেমে দেখি প্রচুর জ্যাম। কি আর করা, গাড়ি না পেয়ে এখন হেঁটেই বাসায় ফিরছি।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের নামে বারবার রাস্তা অবরোধ করা এটা কখনোই কাম্য নয়। এখন তারাও স্বৈরাচারের মতো আচরণ করছে।

দীর্ঘ জ্যামে দুই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে আটকে থাকা টেম্পুচালক রিয়াদ উদ্দীন বলেন, ছাত্ররা টাকা কামায় না তো, তাই ক্ষিধার জ্বালা তারা বোঝে না। তারা আন্দোলন করতে মজা পায়। তারা যদি সাধারণ মানুষের দুঃখ বুঝতো, তবে মানুষকে এভাবে কষ্ট দিত না।

হতাশা নিয়ে তিনি আরও বলেন, এখনো পরিবারের খাবারের টাকা যোগাড় হয়নি, বাজার না করলে বউ-বাচ্চা না খেয়ে থাকবে। এখন শুধু জ্যাম ছাড়ার আপেক্ষায় আছি।

রাস্তা অবরোধ করায় নগরবাসীর ভোগান্তি নিয়ে ইফতেখার নামে বিক্ষুব্ধ ছাত্রের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কমিটি বাতিল না হলে কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। আমরা রাজপথ ছাড়বো না। এই কমিটিতে আমাদের সম্মুখযোদ্ধাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে নারী হেনস্তা ও কিশোর গ্যাংকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, তাদের নিয়ে একপক্ষীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। তাই যতোক্ষণ এই কমিটি বাতিল হবে না আন্দোলন চলবে, কঠোরতা আরো বাড়বে।

এ বিষয়ে হেনস্তার শিকার সাংবাদিক আব্দুর রহমান ইমন বলেন, লাইভে রাস্তা অবরোধ ও নগরবাসীর ভোগান্তি নিয়ে বলছিলাম, এতেই ক্ষেপে যান ছাত্র সমন্বয়করা। তাদের দাবি রাস্তা অবরোধ করলেও নগরীতে কোন হয়রানি ও ভোগান্তি নেই।

তবে সাংবাদিক হেনস্তা ও রাস্তা অবরোধে জন হয়রানির বিষয়ে সমন্বয়ক জোবায়েরুল আলম বলেন, এ ঘটনায় আমি অত্যন্ত লজ্জিত। এটি নিতান্তই ভুল বোঝাবুঝি। তবে আমি এই ব্যাপারে পুরোপুরি জানি না, জেনে অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।

অপরদিকে সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

চাটগাঁ নিউজ/সৈকত/জেএইচ/এসএ

Scroll to Top