চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : জর্ডানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার’ (RISSC) তাদের ২০২৬ সালের জন্য ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিম’-এর তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও রাজনীতি, সমাজসেবা, ধর্ম এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারকারী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের এই তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে।
এই বছর, বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের এই তালিকায় মোট তিনজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি স্থান পেয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন শীর্ষ ৫০ জনের মূল তালিকায় এবং অপর দুজন ৪৫০ জনের সম্মানসূচক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
শীর্ষ ৫০-এ ড. মুহাম্মদ ইউনুস
তালিকার শীর্ষ ৫০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের মধ্যে ৫০তম স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
৪৫০ জনের তালিকায় দুই বাংলাদেশি নারী
শীর্ষ ৫০ ছাড়াও ‘দ্য ৪৫০ লিস্ট’ ক্যাটাগরিতে আরও দুজন বাংলাদেশি নারী তাদের বিশেষ অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন। তারা হলেন-
১. ড. হামিদা হোসেন: তিনি ‘সামাজিক সমস্যা’ (Social Issues) বিভাগে তালিকাভুক্ত হয়েছেন । ড. হামিদা হোসেন একজন মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে পরিচিত ।
২. রাজিয়া সুলতানা: তাকেও ‘সামাজিক সমস্যা’ বিভাগে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে । রাজিয়া সুলতানা একজন আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী, যিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায়, বিশেষ করে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার ঘটনাগুলো নথিভুক্ত ও প্রকাশ করার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন । তিনি ‘ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন’ (FRC)-এর একজন সমন্বয়ক ।
‘দ্য মুসলিম ৫০০: ৫০০ ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস ২০২৬’ শিরোনামের এই মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় এ বছর শীর্ষে স্থান পেয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামি আইনবিদ (ফকিহ), সাবেক বিচারপতি এবং শীর্ষস্থানীয় আলেম শায়খ মুহাম্মদ তাকি উসমানি।
শায়খ মুহাম্মদ তাকি উসমানি বিশ্বব্যাপী ইসলামি অর্থনীতি ও হাদিস শাস্ত্রে তার অবদানের জন্য তিনি মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তৃতীয় স্থানে আছেন ইয়েমেনি সুন্নি সুফি আলেম ও দার আল-মুস্তাফা শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শেখ হাবিব উমর বিন হাফিজ।
শীর্ষ দশের তালিকায় এরপরই যথাক্রমে রয়েছেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি (৪র্থ), জর্ডানের বাদশাহ এইচএম আবদুল্লাহ দ্বিতীয় ইবনে আল-হুসেইন (৫ম), আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড শেখ ড. আহমদ মুহাম্মদ আল-তায়্যিব (৬ষ্ঠ), তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়্যেব এরদোগান (৭ম), সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল-আজিজ আল-সৌদ (৮ম), সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান (৯ম) এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম (১০ম)।
শীর্ষ ৫০ জনের তালিকায় আরও স্থান পেয়েছেন ইরাকের আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী হুসেইন আল-সিস্তানি (১১তম), এইচ এম মুহাম্মদ (ষষ্ঠ মোহাম্মদ), মরক্কোর রাজা (১২তম)। শেখ সালমান আল-আওদা স্কলার ও শিক্ষাবিদ, সৌদি আরব (১৩তম) সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (১৪তম), ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ান্তো (১৫তম), ভারতের মাওলানা মাহমুদ মাদানী (১৬তম)।
এছাড়াও শীর্ষ ৫০ এর তালিকায় আছেন, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, যুক্তরাষ্ট্রের শেখ হামজা ইউসুফ হ্যানসন, বুরকিনা ফাসোর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে, পাকিস্তানের মাওলানা তারিক জামীল, যুক্তরাজ্যের স্কলার ড. টিমোথি উইন্টার (শেখ আবদাল হাকিম মুরাদ), মিশরীয় ফুটবলার মোহাম্মদ সালাহ, তালিবান নেতা মোল্লা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং মালয়েশীয় মুসলিম দার্শনিক অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ নাকীব আল-আত্তাস। এবারের তালিকায় ৫০তম স্থানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস-এর নামও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মগুলোর অন্যতম ইসলাম। বিশ্বজুড়ে এ ধর্মের অনুসারী তথা মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। দেশ, জাতি ও গোষ্ঠী পৃথক পৃথক হলেও তারা সবাই এক উম্মাহ তথা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের অংশ। বিশ্বে মোট ৫৬ টি মুসলিমপ্রধান দেশ আছে। বর্তমানে বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০% এশিয়ায় বসবাস করে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ






