চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : যৌতুকের বলি হয়ে চট্টগ্রামে পটিয়া উপজেলায় বিয়ের আগের দিন কনে রীমা আক্তারের আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহত রীমার ভাই আজগর হোসেন বাদী হয়ে পটিয়া থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় এ মামলা করেন। মামলায় হবু স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে (মোরশেদ) আসামি করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার মামলা করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। আজ শনিবার হবু স্বামীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ। মা-বাবাসহ বর মিজানুর পলাতক।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁওয়ে হীরা তালুকদার বাড়িতে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আত্মহত্যা করা ওই তরুণী রীমা আক্তার (২০) উপজেলার হাইদগাঁও এলাকার হীরা তালুকদার বাড়ির মনির আহমদ প্রকাশ বাচা মিয়ার মেয়ে। রীমা পটিয়া সরকারি কলেজে অনার্সের ছাত্রী ছিলেন। একই এলাকার মফিজুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমানের (মোরশেদ) সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। গতকাল শুক্রবার সেই বিয়ের দিনক্ষণও নির্ধারিত ছিল।
রীমাদের বাড়িতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য গেট সাজানো হয়েছে। মেহেদি অনুষ্ঠানের জন্য স্টেজ তৈরি করা হয়েছে। রান্নাবান্নার জন্য সব সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয়েছে রীমাদের বাড়ির আঙিনায়। যে গেট দিয়ে রীমার বউ সেজে মোরশেদের বাড়িতে যাওয়ার কথা, সেই গেট দিয়ে ঢুকল তাঁর নিথর দেহ। গতকাল শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়।
মামলার বিষয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রীমার আত্মহত্যার ঘটনায় মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এজাহারে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আসামি পলাতক। আমরা তাঁকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করছি।’
বিয়ের আগের দিন তরুণীর ঝুলন্ত লাশ, চিরকুটে হবু স্বামীকে দোষারোপবিয়ের আগের দিন তরুণীর ঝুলন্ত লাশ, চিরকুটে হবু স্বামীকে দোষারোপ
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত মোরশেদের সঙ্গে রীমা আক্তারের তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পারিবারিকভাবেই গতকাল শুক্রবার বিয়ের তারিখ ঠিক ছিল।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে রীমা ও মোরশেদ কয়েক দফায় ভিডিও কলে কথা বলেন। এর পরপরই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রীমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘরে কাগজে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল, ‘আমার পরিবারকে বলছি, মোরশেদকে তোমরা ছাড়বা না। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দিবা।’
সেখানে আরও লেখা ছিল, ‘প্রিয় শখের মানুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে, অনেক ভালোও বেসেছ এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছ। আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারলাম না। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না। আমার পরিবার থেকে যৌতুকের যে টাকা তোমাদের দিয়েছে, সেগুলো শোধ করে দিও। পোস্টমর্টেম করিয়ে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে-মুছে আমাকে কবরে পাঠিও।’
এ বিষয়ে রীমার চাচা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিয়ের দুদিন আগে যৌতুক হিসেবে আমরা ছেলের পরিবারকে ২ লাখ টাকা দিয়েছি। এরপরও মেহেদি অনুষ্ঠানের দিন ছেলে রীমাকে যৌতুকের আরও টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এটা সহ্য করতে না পেরে রীমা আত্মহননের পথ বেছে নেয়।’
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস