বিমান বিধ্বস্তে আহত উক্যসাইন মারমা আর নেই

কাপ্তাই প্রতিনিধি: বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান উক্যসাইন মারমা (১৪)। ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনে তার উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য প্রাথমিকের পাঠ শেষে বাবা-মা তাকে ভর্তি করে দেন ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

সোমবার (২১ জুলাই) তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অন্যদের মতো নিভে গেল কোমলমতি শিক্ষার্থী উক্যসাইনের জীবনপ্রদীপ। লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল রাজস্থলীর এই মেধাবী সন্তান। এ বছর ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। তার অপমৃত্যুতে গ্রামে নেমেছে শোকের ছায়া। বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

উক্যসাইন মারমা রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার উসাইমং ও তেজিপ্রু মারমার ছেলে। বর্তমানে বাবা উসাইমং মারমা রাজস্থলী উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক এবং মা তেজিপ্রু মারমা রুমা উপজেলার ক্যটেইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।

জানা যায়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উক্যসাইনকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মারা যায় সে। এতে নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাবা, মার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন। একমাত্র সন্তানের লাশ বাড়িতে আনতে ঢাকায় গেছেন উক্যসাইনের শোক-সন্তপ্ত বাবা উসাইমং ও মা তেজিপ্রু।

মঙ্গলবার সকালে উক্যসাইনদের রাজস্থলীর বাঙালহালিয়ার কলেজপাড়া এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এলাকাজুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া। এ সময় তাদের বাড়িতে ছিলেন উক্যসাইনের বৃদ্ধ দাদা কংহ্লাপ্রু মারমা, দাদি ক্রাতুমা মারমা ও পিসি (খালা) হ্লামাচিং মারমা। তাদের একমাত্র স্নেহজনকে হারানোর শোকে থামছে না কান্না। প্রিয়জনের এমন হৃদয়-বিদারক অকাল মৃত্যুর ঘটনায় তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই কারো মুখে। শোকে বাকরুদ্ধ পাড়ার লোকজনও।

কান্নায় বিলাপ জড়িয়ে কণ্ঠে উক্যসাইনের দাদা কংহ্লাপ্রু বলেন, নাতি তাকে খুব ভালোবাসতো। সে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে কী নিয়ে কিভাবে বাঁচবেন- কিছুই বলতে পারছেন না তারা।

উক্যসাইনের ফুফু হ্লামাচিং মারমা জানান, ভাইয়ের ছেলের লাশ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বড়দাদা ও বৌদি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ রওনা দিয়েছেন। রাজস্থলীর বাঙাালহালিয়ায় পৌঁছতে রাত ৭-৮টা লাগতে পারে।

কান্নায় ভেঙে পড়ে বিলাপ করে হ্লামাচিং বলেন, তার ভাতিজা সর্বশেষ সাক্রাইন উৎসবে (পহেলা বৈশাখ) বাড়িতে এসেছিল। গত আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনেও মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়েছিল ভাতিজা উক্যসাইনের সঙ্গে। এটাই যে ভাতিজার সঙ্গে আমার শেষ কথা হবে তা ভাবতে পারিনি কখনো।

তিনি জানান, উক্যসাইন খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। বাঙাহালিয়ার নার্সারি স্কুলে পড়া শেষে তাকে সেন্ট পাবলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে সে। বড় দাদার স্বপ্ন ছিল তার ছেলেকে ক্যাডেট স্কুলে পড়াবে। এজন্য ঢাকার মিরপুরে একটি কোচিং সেন্টারেও এক বছর কোচিং করান ছেলেকে। তবে দুর্ভাগ্য- ক্যাডেটে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারেনি। এরপর এ বছর তাকে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। থাকত নিজ স্কুলের হোস্টেলে।

উক্যসাইনের বাবা উসাই মং জানান, ছেলের লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পর বুধবার বাঙালহালিয়ায় নিজ গ্রামে ছেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উক্যসাইনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাকে পুণ্যরাশি দান করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রাঙামাটি রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা জানান, শুনেছি ছেলেটা রাতে মারা গেছে। ঢাকা তার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। ছেলেটি সম্পর্কে আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। এ হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা সবাই শোকাহত।

চাটগাঁ নিউজ/ঝুলন/এমকেএন

Scroll to Top