বিনা খরচে আইনগত সহায়তা পাবেন যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : যেকোন সামান্য বিরোধেও মানুষ একে অপরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। আর বিচারক সংকট, বিচারাধীন আদালাতের প্রতি অনাস্থা, নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়াসহ নানামুখী আইনি প্রতিকূলতায় বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকে মামলাগুলো। এতে করে বাদী বা বিবাদী উভয়পক্ষ আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক ক্ষতির মুখে পড়েন। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণে বাতিঘর হয়ে উঠেছে জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়।

সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিনা খরচে, বিনা দ্বন্দ্বে বিচার প্রার্থীরা সঠিক বিচার পাচ্ছে। লিগ্যাল এইডের আইনি সহায়তায় নিষ্পত্তি হচ্ছে একের পর এক মামলা। দেশের বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন বাড়ছে। জমির বিরোধ সংক্রান্ত অধিকাংশ মামলা এখন দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি হচ্ছে জেলা লিগ্যাল এইডের আইনি সহায়তায়। অস্বচ্ছল, অসহায় বিচারপ্রার্থীদের মুখে ফুটছে হাসি।

চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে আইনি সহায়তা পেতে মোট আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ৫৩২টি। আবেদনগুলো দেওয়ানি, ফৌজদারি ও পারিবারিক অভিযোগ-সংক্রান্ত।

চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রূপন কুমার দাশ বলেন, মামলায় গেলে যেখানে বছরের পর বছর চলে যায়, সেখানে মাত্র ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সমঝোতার মাধ্যমে সম্পত্তি সংক্রান্ত অভিযোগ মীমাংসা করা হচ্ছে। প্রথমে উভয়পক্ষকে সমঝোতার ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। তাতে সমাধান না হলে ভুক্তভোগীর পক্ষে মামলা হয়। জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদেরকে ফৌজদারি, দেওয়ানি, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। প্রান্তিক পর্যায়ের জনসাধারণের মাঝে আইনি সহায়তা বাড়াতে নানামুখী প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, অনেকেই জানেন না সরকারি খরচে মামলায় আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখনো জনসাধারণের মাঝে জেলা লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতনতা তেমন নেই। এজন্য আইনজীবীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। ভুক্তভোগীরা আইনজীবীদের কাছে আসলে বিনা খরচে আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য তাদেরকে লিগ্যাল এইডে পাঠাতে পারেন।

চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) এরশাদুল ইসলাম বলেন, অনেক লোক টাকা-পয়সার অভাবে মামলার খরচ চালাতে পারেন না। লিগ্যাল এইড সরকারি খরচে সেসব ব্যক্তিদেরকে মামলা নিষ্পত্তিতে সহায়তা করে। তাছাড়া আবেদন ছাড়াও অনেকের মামলা চালায় জেলা লিগ্যাল এইড।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, লিগ্যাল এইড চট্টগ্রামের আওতায় ১০০ জন আইনজীবীও দায়িত্ব পালন করছেন। এ আইনজীবীরা সরকারি খরচে চট্টগ্রাম আদালতে ১৩ হাজার ৯৩০টি মামলা পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলা রয়েছে ১০ হাজার ৯৬৮টি, পারিবারিক মামলা ২ হাজার ৩৩৯টি এবং দেওয়ানি ৬২৩টি। গত এক বছরে লিগ্যাল এইডের আইনি সহায়তায় আবেদনকৃত ২৬৪টি মামলার মধ্যে ১৯৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান’ আইন করা হয়। এই আইন অনুসারে, ২০০১ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাও গঠন করা হয়। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে জেলা লিগ্যাল এইডের ‍পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ছয়তলায় জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয় অবস্থিত।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top