বিদেশিদের হাতে বন্দর ব্যবস্থাপনা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত
১০ বিশিষ্টজনের বিবৃতি

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : জনগণের মতামতকে পাশ কাটিয়ে বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী মন্তব্য করে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রামের ১০ বিশিষ্টজন। এনসিটি টার্মিনাল নিয়ে সরকারের বর্তমান অবস্থানের সমালোচনা করেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বর্তমান সরকার একটি ইন্টেরিম বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বন্দর পরিচালনার মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদনের দায়িত্ব এ সরকারের নয়। এমন চুক্তি করতে পারে শুধুমাত্র জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো সরকার। সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে ক্ষেত্রে একটি নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগেভাগে খুব তড়িঘড়ি করে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে জাতির মানসে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, লালদিয়ার প্রকল্পে বাংলাদেশের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী (ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার) বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রতিবেদনে টার্মিনাল অপারেটরের (এপিএম টার্মিনালস) প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর চুক্তি পর্যন্ত কার্যক্রম শেষ করতে ৬২ দিন সময়সীমা ধরা হয়েছিল। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ অস্বাভাবিক দ্রুততায় মাত্র দুই সপ্তাহে এই কার্যক্রম শেষ করেছে। এতেও জনমনের সন্দেহ গভীর হয়েছে।

বিবৃতিতে বিশিষ্টজনরা আরও বলেন, এই ধরনের চুক্তি খুব সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হয়। কারণ, চুক্তির কোনো শর্তের কারণে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত না হলে পরে তার খেসারত দিতে হতে পারে। যার বড় উদাহরণ রয়েছে আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে। দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ায় ২০০৪ সালে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি জিবুতি সরকার বাতিল করলেও ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। তাতে উল্টো জিবুতি সরকারের বিরুদ্ধে সুদসহ ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ এবং স্বত্ব বাবদ আরও ১৪৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের নির্দেশ আদায়ে তারা সক্ষম হয়। এ ধরনের চুক্তির ফলে বিশ্বের বহু দেশের একই রকম খেসারত দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে অনেক। বিভিন্ন দেশের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা প্রশ্ন তুলতে চাই চুক্তিতে টার্মিনেশন, ক্ষতিপূরণসহ যেসব আর্থিক বিষয়াদি রয়েছে তা কেন গোপন রাখা হল? এবং দেশীয় স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন শর্তগুলো প্রকাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

সামনে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। নিউমুরিং টার্মিনালটি দেশীয় জনবল দিয়ে লাভজনকভাবেই পুরোদমে চালু আছে। বর্তমানে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান এটি পরিচালনা করছে। প্রশ্ন হল লাভজনকভাবে চালু টার্মিনালটি কেন আমরা বিদেশিদের দেবো, যেখানে কোনো নতুন বিনিয়োগের সুযোগ নেই? বর্তমান সরকারও কেন বিগত সরকারের পথে হাঁটবে সে প্রশ্নও সংগতভাবেই উঠছে।

বিবৃতিদাতারা হলেন-একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম, কথা সাহিত্যিক ফেরদৌস আরা আলীম, নাট্যজন শিশির দত্ত, কথা সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি ওমর কায়সার, কামরুল হাসান বাদল, কমল সেনগুপ্ত, অলোক রায় ও প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top