চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে এবার বোমা ফাটালেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের।
আজ শনিবার (১ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক সেনা কর্মকর্তাকে ইঙ্গিত করে তিনি এক স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু ‘চাটগাঁ নিউজ’ পাঠকদের জন্য নিম্নে তুলে ধরা হলো।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন—
‘‘বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন রকমের মতামত ও তথ্য প্রকাশ করেন। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সাথে সম্পৃক্ত অনেক ব্যক্তির নাম সামনে আসলেও একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের কথা আমরা অনেকে জানি না। আজকে আপনাদের সামনে ওই ব্যক্তির পরিচয় ও বিস্তারিত প্রকাশ করবো।
বিডিআরের ঘটনা তদন্তের সাথে সরাসরি জড়িত এমন সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে ঘৃনিত এক চরিত্র ‘বিএ ২৬৮৩ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিম আহমেদ (যিনি শেখ হেলালের আত্নীয়)’ ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১১তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে পদাতিক কোরে কমিশন লাভ করেছিলেন। কমিশন পরবর্তীতে উক্ত অফিসার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ইউনিটে চাকুরি সম্পন্ন করেন। সেনাবাহিনীতে যোগ্যতার মানদন্ডে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিম একজন মধ্যম পর্যায়ের অফিসার যিনি পেশাগত জীবনে বিভিন্ন সামরিক কোর্স এবং ক্যাডারে ভালো ফলাফল লাভ না করার প্রেক্ষিতে এবং একই সাথে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ সম্পন্ন না করায় এই অফিসার কে মেজর হতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়।
২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের সময় র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে ডাইরেক্টর ইন্টেলিজেন্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন বিএ ৩২৬৪ ততকালীন লেঃ কর্নেল (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) মোঃ আব্দুল মজিদ, পিএসসি, জি, আর্টিলারি। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মজিদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একজন চৌকস ও মেধাবী অফিসার হিসেবে সুপরিচিত। বিডিআর বিদ্রোহের পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব অফিসারদের রক্ষায় কোন প্রকার কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ না করায় সেনাবাহিনীতে কর্মরত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (কর্নেল এবং তদুর্ধ) বনাম অন্যান্য পর্যায়ের কমিশন প্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অফিসারদের চাপে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ বিডিআর বিদ্রোহের কারণ উদঘাটনের জন্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন ।
২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি সকালে বিডিআর সদর দপ্তরের অভ্যন্তরে অবস্থিত দরবার হলে যখন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল তখন বিডিআরে কর্মরত অনেক অফিসার র্যাবে কর্মরত তাদের কোর্সমেট কিংবা সিনিয়র কিংবা জুনিয়র এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের জীবন রক্ষা করার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। এমনই সাহায্যের আহবানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন র্যাব অধিনায়ক বিএ ৩১৮৯ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামসুজ্জামান খান, পিএসসি, জি+, আর্টিলারি, বিডিআর সদর দপ্তরের হাজারীবাগের দিকে অবস্থিত গেটে আনুমানিক ১৫০ জন র্যাব সদস্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে কর্মরত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল রেজা নূরের আদেশ না পাওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি কোন প্রকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি।
বিডিআর বিদ্রোহের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ে বিস্তারিত অবগত ছিলেন তৎকালীন র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে কর্মরত ডাইরেক্টর ইন্টেলিজেন্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল মজিদ। বিডিআর বিদ্রোহের পরে মোট তিনটি অনুসন্ধানী দল গঠিত হয়—
১. বিডিআর সদর দপ্তরে: স্ক্রিনিং দল। এখানে বিপুল সংখ্যক সামরিক কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে জড়িত ছিলেন।
২. ডিজিএফআই সদর দপ্তরে জেআইসি: প্রধানত ডিজিএফআই কর্মকর্তারা এবং পূর্বের এ সংস্থাসহ আরো কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তারা এতে যুক্ত ছিলেন।
৩. র্যাব সদর দপ্তর: বিশেষ তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ দল, যা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মজিদের দ্বারা সমন্বিত ছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেনাইউনিট থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং জিজ্ঞাসাবাদে বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা এই দলে ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিডিআর বিদ্রোহের পরে ঘটনার ধারাবাহিকতা এবং বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত তদন্ত দল এবং জাতীয় পর্যায়ে গঠিত তদন্ত দল উভয়ে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে কর্মরত ডাইরেক্টর ইন্টেলিজেন্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল মজিদ এর সাথে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করে। একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান অফিসার হিসেবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মজিদ উভয় দলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে আসছিলেন ।
এরই মধ্যে তিন নম্বর দলের অনুসন্ধানে বেশ স্পষ্টতই প্রকাশ পায় যে, বিডিআর বিদ্রোহের পূর্বে বিদ্রোহে জড়িত বিডিআর সদস্যবৃন্দ তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন বিদ্রোহে সমর্থন পাওয়ার আশায়। দলটি বিডিআর বিদ্রোহের সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তি বর্গের মাঝে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ শেখ সেলিম, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবীর নানক এবং ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস’কে চিহ্নিত করে।
এমতাবস্থায় হঠাৎ করেই তিন নম্বর দলটি থেকে অনেক সঠিক ও সত্য প্রতিবেদন কয়েকটি পত্রিকায় ফাঁস হয়ে যায়। আর তখন, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনায় আওয়ামী লীগ নিজ দলের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল মজিদকে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ান (তিনি তিন নম্বর দলের মূল ব্যক্তি ছিলেন) থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ফেরত পাঠিয়ে দেয় এবং তার স্থলে স্থায়ীভাবে পদোন্নতি প্রাপ্তিতে অতিক্রান্ত (সুপারসিটেড) তৎকালীন মেজর আজিম আহমেদকে র্যাব সদর দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত ডাইরেক্টর ইনটেলিজেন্স হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে ।
ডাইরেক্টর ইন্টেলিজেন্স হিসেবে যোগদানের পরে তৎকালীন মেজর আজিমের প্রধান লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি রক্ষা এবং বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত বিডিআর সদস্যদের উগ্রপন্থী ইসলামী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহন করা। নিজ বাহিনীর অফিসারদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বেঈমানি করে তৎকালীন মেজর আজিম ২০০৯ সালের পদোন্নতি বোর্ডে (আগষ্ট ২০০৯) লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন এবং এরপরে আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
পরবর্তীতে এই আজিম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং যুক্তরাজ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত থেকে সেনাবাহিনীতে প্রত্যাবর্তন পূর্বক বয়স সীমা শেষান্তে স্বাভাবিক অবসরে গমন করেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত বিডিআর বিদ্রোহের কারণ উদঘাটনের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের কাছে পরামর্শ থাকবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিমকে তদন্ত কমিশনের মুখোমুখি করে তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করা এবং তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।’’
সূত্র: সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ