‘বিএনপির আ.লীগ বিষয়ক সম্পাদকদের মধ্যে অন্যতম রুমিন ফারহানা’

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানাকে ‘বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক অন্যতম সম্পাদক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রোববার (২৪ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানিতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে এনসিপির নেতাদের ধাক্কাধাক্কি ও মারধরের ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে, তার একটি ‘টেস্ট ম্যাচ’ হয়ে গেল শুনানিতে এনসিপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে।

রুমিন ফারহানার সমালোচনা করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন– ‘বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক রয়েছেন অনেকেই, যাঁরা আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি আওয়ামী লীগ। বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম রুমিন ফারহানা। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, আওয়ামী লীগের ফ্ল্যাটভোগী এবং যারা গুন্ডা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ঠান্ডা করে দিতে চায়, একটি প্রেসক্রিপটিভ ইলেকশনের দিকে আবার যেতে চায়, আমরা বিএনপির এই আওয়ামী বিষয়ক সম্পাদকদের বলব, আপনারা জনগণের পালসকে বুঝুন, ২৪–পরবর্তী জনগণের পালসকে বুঝুন। নতুবা আবার বাংলাদেশ সংকটের দিকে যাবে।’

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আজকের ন্যক্কারজনক ঘটনাই প্রমাণ করছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের সন্ত্রাসীরা কী ভূমিকা রাখবে আর পুলিশ কেমন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে।

এনসিপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন– ‘রুমিন ফারহানা নিজেই বলেছেন, আমরা চাইলে গুন্ডা আনতে পারতাম। এর মানে তারা গুন্ডাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। আজকের ঘটনা আসলে একটি টেস্ট ম্যাচ, কীভাবে তারা ভোটকেন্দ্র দখল করবে। আমরা পুলিশকে দেখেছি বিএনপির পক্ষে সুবিধা দিচ্ছে, আমাদের বাধা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এই কমিশন আসলে একটি পার্টি অফিসে পরিণত হবে। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাই। সে জন্য কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। অন্যথায় পুনর্গঠন ছাড়া উপায় থাকবে না।’

জানা গেছে, নির্বাচন ভবনে আজ দুপুর ১২টার পর সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে শুনানি শুরু হয়। এরপর বেলা একটার দিকে সেখানে মারামারির ঘটনা ঘটে। রুমিন ফারহানার অনুসারী নেতা–কর্মীরা শুনানির সময় মঞ্চ থেকে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেছেন, বিএনপির একপক্ষের নেতা–কর্মীরা আগে তাঁকে ধাক্কা দিলে তাঁর অনুসারীরা সেটার জবাব দিয়েছেন।

এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জমা দেব এবং পর্যবেক্ষণ করব যে তারা কী ব্যবস্থা নেয়। জনগণের জন্যই পুলিশের কাজ হওয়া উচিত, ক্ষমতার দাস হওয়া নয়। যদি জনগণ পাশে থাকে, তাহলে গুন্ডাতন্ত্র টিকে থাকতে পারবে না। আমরা চাই, নির্বাচন কমিশনের বস্তুনিষ্ঠ আচরণ। না হলে এই কমিশনের পুনর্গঠন জরুরি। আমরা শিগগিরই কমিশনের নানা অনিয়ম আপনাদের সামনে তুলে ধরব। বিএনপির আগ্রাসী মনোভাব, গুন্ডাতন্ত্র ও তোষণ নীতি যদি তারা সংশোধন না করে, তবে তাদের গণপ্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।’

এ সময় এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন (শিশির) বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ জানাতে এখানে এসেছি। আমরা ইসির কাছে কোনো ভিক্ষা চাইতে আসিনি, দয়া চাইতেও আসিনি। আমরা বিশ্বাস করি, ইসির দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ থাকা। কিন্তু যদি ইসি কোনো দলের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে আচরণ করে, নয়াপল্টনের দপ্তরের ভূমিকা পালন করতে চায়, তবে সেটা বাংলাদেশে হতে দেওয়া যাবে না। আমরা বহুবার বলেছি, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যার প্রমাণ আজকে ইসির সামনেই আমাদের নেতা আতাউল্লাহর ওপর হামলা।’

মারধরের শিকার হওয়া এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনটি সদর ও বিজয়নগর উপজেলা নিয়ে গঠিত, কিন্তু রুমিন ফারহানা বিজয়নগরের তিনটি ইউনিয়ন কেটে সরাইল-আশুগঞ্জের সাথে একত্র করেছেন, যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাথে যুক্ত। এ জন্য আমি আপিল করেছি এবং আমার এলাকার প্রাণের দাবিতে শুনানির সময় ধার্য করা হয়। কিন্তু আমাকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে শুনানিতে অংশ না নিতে। শুনানিতে বিএনপি ও রুমিন ফারহানার লোকজন তাদের যুক্তি তুলে ধরছে। আমার সময় এলে দাঁড়াতেই রুমিন ফারহানা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। তাঁর গুন্ডারা আমাকে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে মারধর করে। এ সময় আমার সহযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ও যুবশক্তির নেতা সুমন মোস্তফাকেও তারা মারধর করে। আমি চাই, রুমিন ফারহানাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হোক। যদি বিচার না হয়, তাহলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে।’

এর আগে এনসিপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মুশকিলের বিষয় হচ্ছে, তিনি (মো. আতাউল্লাহ) পরিচিত মুখ নন, তিনি এনসিপি থেকে এসেছেন না জামায়াত থেকে এসেছেন, আমি জানি না। তবে উনি প্রথম, সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। তারপর আমার লোকজন তো বসে থাকবে না। আমি তো একজন মহিলা। পরে যখন আমার লোকজনকে মারধর করেছে, আমার লোকজনও জবাব দিয়েছে। এটা সিম্পল।’

অভিযোগ করে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৩ আসনের প্রার্থী (খালেদ হোসেন মাহবুব) গুন্ডাপান্ডা নিয়ে প্রবেশ করে। যে বিএনপির জন্য ১৫ বছর লড়াই করেছি, সে বিএনপির নেতা–কর্মীরা আমার গায়ে হাত তু্লেছে, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’

তবে রুমিন ফারহানার এ অভিযোগ অস্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আসলে এনসিপির সঙ্গে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার একটা তর্কবিতর্ক হয়েছে। এটা আসলে দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এই লেভেলে (পর্যায়ে) এসে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top