উজ্জ্বল দত্ত : পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সন্তানদের রাজনীতিতে আসার সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের। সেই ধারাবাহিকতায় ৫ আগষ্ট পরবর্তী অনুকূল পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতে শীর্ষ নেতার সন্তানদেরকেও রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ ও ব্যানার-পোস্টারে তারা সক্রিয় রয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে রাজনীতির মাঠে বিএনপির শীর্ষ নেতার পাঁচ সন্তানের নাম বেশ আলোচিত হচ্ছে। তরুণ এই পাঁচ তুর্কি হচ্ছেন- বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির স্থায়ী সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইস্রাফিল খসরু, বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে কেন্দ্রীয় পাট শ্রমিক দলের সভাপতি সাঈদ আল নোমান তূর্য, বিএনপি সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
এই তালিকায় আরেক তুর্কির নাম ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক। তাঁর বাবা ছিলেন সাবেক হুইপ ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। ওয়াহিদুল আলম হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও চারবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।
বর্তমান সময়ে এই পাঁচ নেতা রাজনীতিতে নানাভাবে সক্রিয় কার্যক্রম শুরু করেছেন। স্ব স্ব এলাকায় নানামুখী প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। তাঁরা নেতাকর্মীদেরকে সাথে নিয়ে পালন করছেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সেবামূলক কর্মসূচি।
এসবের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটে এই তিন তরুণ নেতার জায়ান্ট ব্যানার-পোস্টারও চোখে পড়ছে। ব্যস্ততম জিইসির মোড় এলাকায় আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান তূর্যের একটি জায়ান্ট ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে। কাজীর দেউড়ি মোড়ে মীর নাছির উদ্দীনের ছেলে মীর হেলালের ছবিওয়ালা একটি জায়ান্ট ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে। আগ্রাবাদ, বারিকবিল্ডিংসহ বন্দর এলাকার কয়েকটি মোড়ে ইস্রাফিল খসরুর ছবি সম্বলিত ব্যানার চোখে পড়ে।
অন্যদিকে, নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সেবামূলক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। হুম্মাম কাদের চৌধুরীও বর্তমান সময়ে রাউজানসহ নগর রাজনীতি আর খেলাধুলায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে রেখেছেন। তবে এই তরুণ তুর্কিরা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছাড়াও স্ব স্ব এলাকাতেও চালিয়ে যাচ্ছেন নানামুখী প্রচার প্রচারণা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই নবীন প্রজন্মের এই নেতারা নিজেদের আগমন জানান দিচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১১ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচন করার ব্যাপারে দল থেকে গ্রিন সিগন্যালে রয়েছেন। তবে তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসনটিও নিজের কাছে রাখতে চান। এ আসন থেকেও তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। কেন্দ্র থেকে যদি তিনি দুই আসনে নির্বাচনী টিকিট পেয়ে যান তাহলে একটিতে তিনি তার ছেলে ইস্রাফিল খসরুকে দিয়ে নির্বাচন করাবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
পিতার পরামর্শে ইস্রাফিল খসরু চট্টগ্রাম নগর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাকে বিভিন্ন সভা, সমাবেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, এ আসনটি থেকে আবদুল্লাহ আল নোমানের পুত্র সাঈদ আল নোমানও নির্বাচন করতে আগ্রহী। কিন্তু একদিকে পিতার শূণ্যতা অন্যদিকে আমীর খসরুর মত হেভিওয়েট ম্যান- সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনটিতে টিকিট পাওয়া তূর্যের অনেকটা কঠিনই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
তবে বিগত সময়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। এ আসন থেকে নির্বাচনে জিতে তিনি বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রীও হয়েছেন। তবে জীবদ্দশায় আবদুল্লাহ আল নোমান নানা কারণে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন। একদিকে আওয়ামী লীগ শাসনামল অন্যদিকে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এই নেতা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ শাসনের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে এই নেতার প্রায়শ অনুপস্থিতি সেসময় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল।
এরই মধ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল্লাহ আল নোমান মারা গেছেন। দলের এই সুসময়ে পিতার আকষ্মিক মৃত্যু পুত্র সাইদ আল নোমানকে পারিবারিক, রাজনৈতিক উভয়দিক থেকেই চাপে ফেলে দিয়েছে। বলা যায়, এখন তিনি একা। বাবা থাকলে দলের কাছে পুত্রের জন্য আবদার করতেন- এটা স্বাভাবিক। এখন বাবার অনুপস্থিতিতে সাঈদ আল নোমান কেন্দ্রের কতটা সুদৃষ্টি পাবে- সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আমীর খসরু বিএনপির একজন হেভিওয়েট ফিগার। তাছাড়া এই চৌধুরী পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত। ইস্রাফিল খসরুর দাদা মাহমুদুন্নবী চৌধুরী ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে সীতাকুণ্ড-ডবলমুরিং আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মন্ত্রীগিরিও করেছেন। আর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বিএনপি জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম-১০ আসনটির মনোনয়ন দৌঁড়ে কে থাকবেন এগিয়ে ইস্রাফিল খসরু নাকি সাঈদ আল নোমান তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইস্রাফিল খসরু বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। জনমানুষের কাছাকাছি থাকা, মানুষের সেবা করা এটা পারিবারিক শিক্ষা। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এখন আলোচনা করতে চাচ্ছি না।
সাঈদ আল নোমান বলেন, নিজের অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের সেবা করার নাম রাজনীতি। স্বনির্ভর শিক্ষিত বাংলাদেশ রাজনীতির পূর্বশর্ত। মনোনয়ন পেলে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক চসিক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সরব রয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে দলের একাধিক নেতাকর্মী। বাবার পাশাপাশি মীর হেলালও যদি দলের নমিনেশন চান সেক্ষেত্রে দল কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এ বিষয়ে জানতে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং ব্যারিষ্টার মীর হেলাল উদ্দিনের সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ