বান্দরবান প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের রুমা বেথেল পাড়া থেকে ১৮ জন নারীসহ আরও ৪৯ জন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫৬ জনে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, রুমা থেকে নতুন করে আটক ৪৯ জনকে রাতে সাড়ে ৭টায় গাড়িতে করে বান্দরবান সদর থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হবে।
এদিকে বান্দরবানে সেনাবাহিনী-র্যাব-পুলিশের পৃথক অভিযানে কেএনএফের ছয় সদস্য ও সোনালী ব্যাংকের সহকারী ক্যাশিয়ারকে আটক করা হয়। এ সময় থানচিতে কৃষি ব্যাংক ডাকাতির সময় ব্যবহৃত জিপগাড়িসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, রুমা-থানচিতে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের তাণ্ডবের ঘটনায় রুমা-থানচিতে ৮টি মামলা হয়েছে। তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে সেনাবাহিনী-র্যাব-পুলিশের সাড়াশি অভিযান চলছে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায়।
যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে যুক্ত হয়েছে সাঁজোয়া যান। তাছাড়াও চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৪টি বিশেষ সাঁজোয়া যান এপিসি আনা হয়েছে এ দুই উপজেলায়। যা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল দেবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন আরও বলেন, উপজেলাগুলোতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে চারটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) আনা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আরও বাড়ানো হবে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় এসব সাঁজোয়া যানগুলো রুমা-থানচি উপজেলায় ব্যবহার করা হবে।
এদিকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সব ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেএনএফ। সশস্ত্র সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কেএনএফের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং সোমবার সকালে এই বার্তা প্রদান করেন।
বার্তায় বলা হয়, আজ সোমবার বিকাল ৫টা থেকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকা সমূহের সকল ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সকল গাড়ি সমিতির জন্য এই সতর্কবার্তা। জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী প্রত্যেক যানবাহনের সমিতি ও মালিকগণ তাদের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যের জন্যে দায়ী থাকবে।
এদিকে কেএনএফের এই সহিংহতার ঘটনায় আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এলাকা জুড়ে। তিন উপজেলার (রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি) ব্যাংকগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন উপজেলার বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। তিন উপজেলার ব্যাংক বন্ধ থাকায় বান্দরবান জেলা সদরে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। ফলে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে গণপরিবহনসহ অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছে না। রুমা বাজার এখনও জনশূন্য।
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল রাতে রুমার সোনালী ব্যাংকে শতাধিক কেএনএফ সদস্য অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার সদস্যদের জিম্মি করে ১৪টি অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে। এর পরের দিন থানচিতে দিন দুপুরে কৃষি ও সোনালী ব্যাংক লুট করে মোট দুই ব্যাংক থেকে ১৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় এবং রাতে থানচি থানায়ও গুলি বর্ষণ করে হামলা চালায়। এরপর থেকে কেএনএফ দমনে পাহাড়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে যৌথ বাহিনী।
চাটগাঁ নিউজ/এসবিএন