বান্দরবানে পালিত হচ্ছে প্রবারণা পূর্ণিমা

বান্দরবান প্রতিনিধি: পার্বত্য বান্দরবানে পালিত হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা (ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে)। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

এই পূর্ণিমা পালনের মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও গৃহীদের পাপমোচন হয় বলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশ্বাস। এই দিনে বুদ্ধপূজা, সংঘদান, পিণ্ডদান, অষ্টপরিষ্কার দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, শীল গ্রহণ, প্রদীপ পূজা, ফানুস ওড়ানোর মতো নানা আচার পালন করা হয়।

প্রতি বছরের মতো এবারও তিন দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে এ উৎসব।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে বান্দরবানের বৌদ্ধ বিহারগুলো ছাড়াও পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে ধর্মীয় ও আদি সামাজিক নানান ঐতিহ্যের অনুষ্ঠান উদযাপন, জগতের মঙ্গল কামনায় বিহারে বিহারে চলছে প্রার্থনা।

উৎসব উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ উপলক্ষে রাজহংসী আকৃতির বিশাল রথ তৈরি করে তার ওপর বুদ্ধ মূর্তি বসানো হবে। সেটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে তৈরি করা হয়েছে ভয়ংকর আকৃতির পুতুল। ওই সময় রথযাত্রার পেছনে বৌদ্ধ ভক্তরা প্রদীপ হাতে দেশনা গান পরিবেশন করবেন। ৬ অক্টোবর রাতে শহরের বিভিন্ন পাড়ায় আয়োজন করা হয়েছে পিঠা তৈরির উৎসব। তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে পিঠা তৈরি করবে এবং ভোরে সেগুলো ভগবান বুদ্ধকে দান করবে। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের মধ্যেও পিঠা বিতরণ করা হবে।

উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চনুমং জানান, এবারের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে মঙ্গল রথযাত্রা, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন, পিঠা উৎসব, ফানুস ওড়ানো, পঞ্চশীল গ্রহণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় ঐতিহ্যবাহী রাজা মাঠে গুরু ভান্তেদের নিয়ে ধর্মদেশনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। ।

এদিকে উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি ও সাদা পোশাকের টিম মোতায়েন থাকবে। খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনায় বান্দরবানে কোনো প্রভাব পড়েনি। এখানে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বান্দরবানের মানুষ দেশ ও অঞ্চলকে ভালোবাসে। তাই উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে।

এদিকে বান্দরবানের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে তৈরি করেছে ফানুস। পাশাপাশি মঙ্গল রথযাত্রার প্রস্তুতিও শেষ বলে জানিয়েছেন রথশিল্পীরা।

রথ কারিগর ক্যওয়ান মারমা জানান, কয়েকজন বন্ধু মিলে রাজহংসীর আদলে একটি রথ ও পাঁচটি পুতুল তৈরি করেছেন তারা। কাজগুলোও শেষ হয়েছে। প্রবারণার প্রথম দিন রথটি বিহারে নেওয়া হবে। পরদিন শোভাযাত্রার মাধ্যমে শহর প্রদক্ষিণ শেষে তা সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে।

চাটগাঁ নিউজ/ইলিয়াস/এমকেএন

Scroll to Top