নিজস্ব প্রতিবেদক : পাহাড়ি ঢলে ও তিনদিনের টানা বর্ষণে বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। লামা-আলীকদম সড়ক, গর্জনিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে পানি উঠেছে। ফলে জেলা শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে ৩ উপজেলার। জেলা শহরের প্রবেশদ্বার বান্দরবান-কেরানিহাট সড়কের বাজালিয়া পয়েন্টে রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল ৯টায় নেওয়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেকর্ড অনুযায়ী, লামা উপজেলায় মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে (বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৮ এমএসএল) এবং বাকখালি নদীর রামু পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি (৫ দশমিক ৭৯ এমএসএল) পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে সাঙ্গু নদীর বান্দরবান শহর পয়েন্টে (বিপৎসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ৮০ এমএসএল) পানির উচ্চতা ছিল ৯ দশমিক ৬ এমএসএল।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, লামা উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮২ দশমিক ৫ মিলিমিটার এবং বান্দরবানে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১০০ পরিবার পৌর এলাকার তিন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
লামার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও লাবণী আক্তার বলেন, লামা পৌর শহরের নিচু এলাকা লাইনঝিরিতে সড়ক ও কিছু ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। এমনিতে লামা নিচু এলাকা হওয়ায় প্রতিবছরের বর্ষায় এর কমবেশি ডুবে যায়। এবারও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় আবারও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে গত বুধবার থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই শতাধিক পরিবার। এতে পরিবারগুলোর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা বর্ষণের কারণে ইউনিয়নের অনেক স্থান প্লাবিত হয়েছে। এতে দুই শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি অনেক স্থানে পাহাড় ধসে রাস্তাঘাটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবান জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করে প্রচার চালানো হয়েছে। বান্দরবানে আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
আলীকদম উপোজলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রুবায়ন দেব বলেন, চৈক্ষ্যং স্কুলের সামনে হাঁটু সমান পানি হয়েছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১০-১৫ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। আর যদি না কমে তাহলে আরও বাড়তে পারে। এ জন্য ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হলে সাঙ্গু নদীতে দ্রুত পানি বাড়তে থাকবে এবং যেকোনো সময় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
জেলা প্রশাসক শাহ মোহাজিদ উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও লামা উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়েছে পাহাড়। পাহাড় ধসে ও সড়ক ডুবে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ রয়েছে অনেকস্থানে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজনদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সাতটি উপজেলায় ২২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে প্রশাসনের লোকজনের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন সহায়তা করছে। এ ছাড়া পাহাড় ধ্বসের এলাকাগুলোকে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা। বন্যারকবলিত এলাকাগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার ব্যবস্থার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পরিদর্শন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট মাসে পাহাড়ি ঢল ও লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে বান্দরবান ও লামা শহর ব্যাপকভাবে বন্যা কবলিত হয়।