চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমদের অঢেল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে একের পর এক। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার সম্পদ স্থাপনার তথ্য আসছে। এবার পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও পাওয়া গেছে তার বিশাল সম্পদের তথ্য। বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নে ও লামার সরই ইউনিয়নে স্ত্রী, কন্যা ও নিজের নামে কিনেছেন শত একরের জায়গা। ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রভাব খাটিয়ে ক্রয়কৃত সম্পত্তির পাশাপাশি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় অনেক দরিদ্র পরিবারের জায়গাও। এসব জায়গায় গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ বাগান। রয়েছে মৎস্য ঘের, গরুর খামারসহ বিলাসী জীবন যাপনের জন্য বাগানবাড়ী। খামারে ৩৭ টি গরু আছে বলে জানান, কেয়ার টেকার।
দুদকের অভিযানে একের পর এক বেরিয়ে আসছে এসব তথ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝের পাড়া এলাকায় স্ত্রী জীশান মির্জা, মেয়ে ফারহিন রিশতা ও নিজ নামে কিনেছেন ২৫ একর পাহাড়ি জায়গা। সে জমির উপর গড়ে তুলেছেন মৎস ঘের, গরুর খামারসহ আলিশান বাগানবাড়ী। যাতায়াতের জন্য করা হয়েছে সড়কও। নেয়া হয়েছে আলাদা বিদ্যুৎ লাইন। জায়গার আশেপাশে কোনো জনবসতি না থাকলেও বেনজীরের জায়গায় দেখা যায় বিদ্যুতের সংযোগ। আর অবকাশ যাপনের জন্য করা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোতলা বাড়ি। এ ছাড়া বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজায় বেনজীরের নামে-বেনামে অর্ধশত একরের বেশি পাহাড়ি জায়গাও পাওয়া গেছে।স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া পার্বত্য এলাকায় অন্য কেউ জমি কেনার নিয়ম না থাকায় শুধুমাত্র নোটারী পাবলিকের মাধ্যমেই নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করেছেন এসব জায়গা।
রেজিস্ট্রি না করায় প্রশাসনের কাছে নেই জায়গার কোনো দলিল। আর নিজে দেখাশোনা করতে না পারায় জমি কেনার পর স্থানীয় এক আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে লিখিতভাবে দায়িত্ব দেয়া হয় এসব জায়গা দেখাশোনা করার জন্য। তার মাধ্যমে সেখানে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির বাগান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাম মাত্র মূল্যে ও বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এসব জায়গা দখল করা হয়েছে। সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি টংগঝিরি এলাকার বাসিন্দা অজিত ত্রিপুরা বলেন, আমরা ছোট ছিলাম। অভাবের কারণে বাবা আমাদের পাঁচ একর জায়গা বেনজীর নামে এক পুলিশ অফিসারের কাছে বিক্রি করে দেয়। শুধু আমাদের পরিবার না, অনেক পরিবারের জায়গা পুলিশ অফিসার নাম মাত্র কিছুটা দিয়ে নিয়ে নেয়। আবার অনেকেই বাধ্য হয়েছে দিয়ে দিতে।
টংগঝিরি এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, এখানে প্রায় ৬৫-৭০ টির মত ত্রিপুরা পরিবার ছিল। এখন ২৫-৩০টি পরিবার আছে। বেনজীর নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক তাদের জায়গা দখল করে বাগান করেছে। সরই ডলুছড়ি মৌজায় বেনজীরের জায়গা দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ইব্রাহিম বলেন, এক পুলিশ অফিসারের জায়গা বলে শুনেছি, কিন্তু উনার সাথে আমার কখনো দেখা বা যোগাযোগ হয় নাই।
কেয়ারটেকার ইব্রাহিমের স্ত্রী বলেন, আমি আগে বাগানে থাকতাম না। কিছুদিন হলো বাগানে এসেছি, এটা কার জায়গা আমি কিছুই জানি না, তবে এখন শুনতেছি বেনজীর নামে এক পুলিশ অফিসারের জায়গা। তিনি আরও বলেন, অনেক লোকজন আসতেছে, জায়গা দেখতে। অনেকে এসে ভিডিও করতেছে। তবে কি কারণে কেন আসতেছে সে বিষয়ে কিছুই জানি না।
সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উক্যনু মার্মা বলেন, বান্দরবানে বিভিন্ন এলাকায় বেনজীরের নামে অনেক সম্পত্তি আছে। আমার ইউনিয়নেও বেনজীরের সম্পত্তি আছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে পুলিশ কমিশনার থাকা অবস্থায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নামে বেনামে বান্দরবানে জায়গা কিনেন বেনজীর আহমেদ। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর জনগণের মাঝে টক অব দা বান্দরবানে পরিণত হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস