বাতিলের শঙ্কায় বান্দরবানের পলিটেকনিক প্রকল্প
৮ বছরেও হয়নি জমি অধিগ্রহণ

বান্দরবান প্রতিনিধি: দীর্ঘ আট বছরেও জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু না হওয়ায় বান্দরবানে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পটি এখন বাতিলের মুখে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, উপযুক্ত জমি চিহ্নিত হলেও রাজনৈতিক প্রভাব ও কিছু সুবিধাভোগীর বিরোধিতায় তা অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশের ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। অন্যান্য জেলায় কাজ এগোলেও বান্দরবানে জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় প্রকল্পটি অনিশ্চয়তায় পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া এলাকায় উপযুক্ত ৫ একর জমি চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অধিগ্রহণ প্রস্তাব পাঠানো হয়। তবে রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের প্রভাবে ওই জমি অধিগ্রহণে আপত্তি জানানো হয়। আপত্তিকারীরা দাবি করেন, জমির মালিকদের মধ্যে একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতার ভাই রয়েছেন এবং এলাকাটি পাহাড়িদের পাড়ার নিকটবর্তী হওয়ায় সেখানে সহিংসতা হতে পারে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত স্থানের পাশে কোনো পাহাড়ি পাড়া নেই, বরং একটি পাহাড় জায়গাটিকে জনবসতি থেকে আলাদা করে রেখেছে। স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত একটি গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব জমিতে (সুলতানপুরে) প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। অথচ ওই জমি তিন ফসলি হওয়ায় পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অযোগ্য এবং সেখানে নির্মাণ ব্যয়ও অনেক বেশি হবে।

সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা বলেন, মাঝেরপাড়া এলাকার জমিটি নির্জন, নিরাপদ ও যোগাযোগ সুবিধাসম্পন্ন। আপত্তির মূল কারণ— জমির মালিকদের সঙ্গে একটি দলের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা।

তবে জমির মালিক ইদ্রিছ চৌধুরী, শহীদুল আলম ও তানজিনা আফরিনের সাথে কথা হলে তারা জানান, তাদের সকলেই শিক্ষক ও সরকারি চাকুরিজীবী এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিতে প্রস্তুত আছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান— প্রস্তাবিত জায়গার পাশে চা বোর্ড অফিস, রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, পিটিআই, ম্যাটস ও আনসার ব্যাটালিয়নসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইনস্টিটিউট নির্মাণের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা।

তবে তাদের অভিযোগ, বহিরাগতদের উস্কানিতে একটি গোষ্ঠী ভুল তথ্য ছড়িয়ে প্রকল্পটি বানচালের চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ভুল তথ্য ও বহিরাগতদের উস্কানিতে আটকে আছে বান্দরবানের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রকল্প।

স্থানীয়দের স্পষ্ট দাবি— প্রস্তাবিত জায়গাটিই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এলাকার একমাত্র সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নটি চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, পলিটেকনিক স্থাপন ঠেকাতে একটি কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্র করছে। এতে প্রকল্প বাতিল হলে আন্দোলনে নামবে নাগরিক সমাজ।

তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফা সুলতানা বলেন, তদন্তকালে যাদের পেয়েছি, তারা প্রকল্প স্থাপনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা— সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসাইন বলেন, মাঝেরপাড়া এলাকাটি সকল দিক বিবেচনায় উপযুক্ত। সুলতানপুর দূরবর্তী ও তিন ফসলি হওয়ায় অযোগ্য।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, এখানে ইনস্টিটিউট হলে এলাকার শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। দ্রুত জমি অধিগ্রহণ না হলে প্রকল্প বাতিল হয়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম মনজুরুল হক জানান, জায়গাটি পরিদর্শন করে ইতিবাচক মত দেয়া হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন এলেই অধিগ্রহণ শুরু হবে।

চাটগাঁ নিউজ/ইলিয়াছ/জেএইচ

Scroll to Top