নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজানে সারাদিনের রোজা শেষে ইফতারে এক টুকরা তরমুজ যেন ওষ্ঠাগত প্রাণে এক চুমুক প্রশান্তি। কিন্তু সেই প্রশান্তি আর পাচ্ছে কজন। রমজানের বাজারে তরমুজে ভরপুর। কেটে রাখা তরমুজের লাল টকটকে পিস চোখে পড়লেই জিবে জল চলে আসে। কিন্তু সেই তরমুজের গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছে না। তরমুজের ভিতরে যেমন লাল, দামেও বলা যায় আগুন লাল।
খুচরায় দুই/আড়াই কেজি ওজনের একেকটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তিন/সাড়ে তিন কেজি ওজনের তরমুজের দাম ৩০০- ৩৫০ টাকা। ৭-৮ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫০০-৬০০ টাকায়।
দাম অনুপাতে হিসাব করলে দেখা যায়, পিস হিসাবে কিনলেও ক্রেতাদেরকে বাস্তবে তরমুজ কিনছেন ১০০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ বাজারে তরমুজ পিস প্রতি বিক্রি করা হলেও বাস্তবে বিকিকিনি চলছে কেজির মাপে!
ফিরিঙ্গিবাজারস্থ ফল মার্কেটের আড়ত মালিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্ষেত পর্যায়ে একশ তরমুজের উৎপাদন খরচ পড়ে আনুমানিক ১০ হাজার টাকা। তবে রমজানের সিজন পড়ে যাওয়ায় এবার মাঠ পর্যায়েই একশ তরমুজের দামে উঠেছে গড়ে ১৫-১৮ হাজার টাকার কাছাকাছি। মাঠ থেকে পাইকারি পর্যায়ে সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে (একশ) ২০/২২ হাজার টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে এসে শ’প্রতি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫/৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ খুচরায় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২৫০/৩০০ টাকায়।
চট্টগ্রাম ওয়াসা মোড় এলাকায় ভ্যানগাড়ি থেকে ২৫০ টাকায় একটি তরমুজ কিনেছেন আসগর আলী। তিনি জানান, রমজান শুরুর পর কয়েকদিন ধরে মেয়ে তরমুজের আবদার করছে। তাই কিনলাম। সাধ থাকলেও আমাদের সাধ্য সীমিত। বছর দুয়েক আগেও ২৫০ টাকার তরমুজ মানে ৭-৮ কেজি ওজনের মস্ত একটি তরমুজ। আর এখন ২৫০ টাকায় যে তরমুজ কিনেছি তা তার তিন ভাগের এক ভাগ। একটি বড় তরমুজের জন্য ফিরিঙ্গিবাজার ফল মার্কেটেও গিয়েছি। কিন্তু সেখানে পাইকাররা খুচরায় বিক্রি করে না। আবার মার্কেটের বাইরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে দাম কিন্তু বরাবরই বেশি। বিক্রেতারা বুঝে গেছে, উচ্চমূল্যের তরমুজ স্বচ্ছল, বিত্তবান ছাড়া সবাই কিনবে না। আমাদের মত কাস্টমাররা যার দরকার সে-ই কিনবে। তাই তারা ইচ্ছেমাফিক দাম বসিয়ে রেখেছে।
অন্যান্যবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন ফল মার্কেটে অভিযান চালানো হত। তবে এবার বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের বাজারে অভিযান শুরু হলেও এখনো ফলের বাজারে অভিযানে নামেনি জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কেউ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে গঠিত ২১টি সার্কেলের অধীনে পরিচালিত ৪০০টি অভিযানে ক্রমান্বয়ে ফলের বাজার পরিদর্শনেরও সিডিউল রয়েছে।
জানা গেছে, অনাবৃষ্টি ও শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এবার তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার আগাম পেকেও গেছে তরমুজ। তাই বাজারেও আগাম এসে গেছে রসে টসটসে দেশিয় এই ফলটি। তার ওপর চলছে আবার রমজান মাস। অর্থাৎ তরমুজের একেবারে রমরমা বাজার।
নগরীর বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়ি, লাভলেইন, রিয়াজুদ্দিন বাজার, কদমতলী ফলমন্ডি, ফিশারীঘাট, ফিরিঙ্গিবাজার ফলমন্ডি সহসবখানেই তরমুজের ছড়াছড়ি। আকার, গুণেমানেও এবারের তরমুজ তুলনামূলক ভালো। তবে দাম ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা মোড় এলাকায় ভ্যানগাড়ি থেকে ২৫০ টাকায় একটি তরমুজ কিনেছেন আসগর আলী। তিনি জানান, রমজান শুরুর পর কয়েকদিন ধরে মেয়ে তরমুজের আবদার করছে। তাই এটি কিনলাম। সাধ থাকলেও আমাদের সাধ্য সীমিত। বছর দুয়েক আগেও ২৫০ টাকার তরমুজ মানে ৭-৮ কেজি ওজনের মস্ত একটি তরমুজ। আর এখন ২৫০ টাকায় যে তরমুজ কিনেছি তা তার তিন ভাগের এক ভাগ। একটি বড় তরমুজের জন্য ফিরিঙ্গিবাজার ফল মার্কেটেও গিয়েছি। কিন্তু সেখানে পাইকাররা খুচরায় বিক্রি করেন না। আবার মার্কেটের বাইরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে দাম কিন্তু বরাবরই বেশি। বিক্রেতারা বুঝে গেছে, উচ্চমূল্যের তরমুজ স্বচ্ছল, বিত্তবান ছাড়া সবাই কিনবে না। আমাদের মত কাস্টমাররা যার দরকার সে-ই কিনবে। তাই তারা ইচ্ছেমাফিক দাম বসিয়ে রেখেছে।
শুক্রবার বিকালে কদমতলী ফলমন্ডিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বাজারে আকার ভেদে একশ তরমুজ সর্বনিম্ন ৬ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ও রাঙ্গামাটি, মায়ানী অঞ্চলের তরমুজ চট্টগ্রামে আসছে। আজ কদমতলী ফলমন্ডিতে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার টাকায় প্রতি একশ তরমুজ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে কদমতলী ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম।
তিনি জানান, একেক দিন তরমুজের দাম একেক রকম নির্ধারিত হয়। বাজারে গাড়ি বেশি ঢুকলে সরবরাহ বেশি থাকলে দাম কমে। আবার সরবরাহ কম থাকলে তরমুজের দাম বাড়তি থাকে। পাইকারিতে ৮-১০ কেজি ওজনের তরমুজ ২৬/২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরাতে তরমুজের অতিমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাইকারিতে যে তরমুজ ২৬০ টাকা বা ২৮০ টাকায় কেনা পড়ে। সে তরমুজ খুচরায় সাড়ে ৩০০ টাকার বেশি বিক্রির কথা নয়। আমাদের কাছে পাইকারি তরমুজ বিক্রির ক্ষেত্রে রশিদ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া প্রত্যেক আড়তদারদেরকে মূল্য তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশনা দেয়া আছে। জেলা প্রশাসনের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিক্রির সময় রশিদ দেয়া, মূল্য তালিকা প্রদর্শন, ৩০ শতাংশ লাভে বিক্রির ব্যাপারে স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তবে কিছু অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ী খুচরা পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে তরমুজের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা সত্যি। এগুলো নগরীর ছোট বাজারগুলোতে বেশি ঘটে থাকে। পাইকারি বাজারে এ সুযোগ নেই। ২৮০ টাকায় কেনা তরমুজ ৩০ শতাংশ লাভে খুচরায় সর্বোচ্চ ৩৬০-৩৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এখন সে তরমুজ যদি ৫০০-৬০০ টাকা দাম হাঁকে, সেটা জোচ্চুরি।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ