সিপ্লাস ডেস্ক: স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে কাজ করতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপনির্বাচনে বিজয়ী নতুন এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই কথা বলেন।
সরকারের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করতে পেরেছি। বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে হবে। সেটা সকলকে নিবেদিত প্রাণ হয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষের সেবা করে যাবেন এটাই আমি চাই।
রোববার বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২৪তম অধিবেশনের প্রথম দিনের বৈঠক শুরু হয়। এর আগে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অধিবেশন চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো-কমানোর ক্ষমতা স্পিকারের হাতে থাকবে।
অধিবেশনের শুরুতে দুই এমপির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। শোকপ্রস্তাব গ্রহণের পর সংসদে এক মিনিট নিরবতা পালন ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের এমপি মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, সংসদের অধিবেশন শুরুই করতে হয় শোক প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে। আশা করা হয়েছিল এবার ব্যতিক্রম হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। এই সংসদের ২৮ জন সদস্য মারা গিয়েছেন। যেখানে ২৬ জনই আওয়ামী লীগের। আর দুইজন জাতীয় পার্টির। এর মধ্যে কয়েকজন মহিলা সদস্যও রয়েছেন।
আব্দুল কুদ্দসকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্দুল কুদ্দুস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ করতেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। নাটোর ছিল সন্ত্রাসের জায়গা। তিনি সেখানে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও তাকে জবরদস্তি করে হারানো হয়েছিল। তিনি জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেবেকা মমিনের সঙ্গে আমার ছাত্রজীবন থেকে পরিচয় ছিল। তিনি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন তখন থেকে তার সঙ্গে আমার পত্র বন্ধুত্ব ছিল। তিনি সবসময় চিঠি লিখতেন। আমিও উত্তর দিতাম। তিনি চিঠিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলতেন। আমি কলেজে ভিপি হওয়ার পর চিঠি দিয়ে উৎসাহিত করেন। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মতিউর রহমান ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচন করতেন। কিন্তু আমরা যখন জোট করি তিনি তার আসনটি রওশন এরশাদকে ছেড়ে দেন। তিনি অনেক বড় নেতা ছিলেন। যে মুহূর্তে আমি তাকে বললাম জোট করব এই সিটটি ছাড়তে হবে। তিনি এক মুহূর্তের জন্যও আপত্তি করেননি। সঙ্গে সঙ্গে সিটটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। না হলে তিনি এখন ওই সিটের এমপি থাকতেন।
বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীদের হারিয়েছেন উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, তারা যে সংগ্রাম করে গেছেন। জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করছেন। জাতির পিতার পাশে ছিলেন। জাতির পিতাকে হত্যার পর তারা নানা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রাজনীতি জনগণের কল্যাণে। রেবেকা মমিন বা আব্দুল কুদ্দুস তারা সব সময় জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে রেবেকা মমিন জমি দান করে গেছেন। এই ধরণের মানসিকতা তাদের ছিল। তাদের হারিয়েছি। এটা সত্যি কষ্টের বার বার আমাদের শোকপ্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে হয়।
তিনি বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমাদের উন্নয়নের ধারাটা একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। এটা সম্ভব হয়েছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সংসদ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছে এ কারণে। আজকে যাদের হারিয়েছি এবং সেখানে নতুন যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন- তাদের কাছে আবেদন থাকবে- যে আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া-এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
তিনি বলেন, মানুষের সেবা করাটাই সব থেকে বড় পাওয়া। এর চেয়ে বড় কিছু নেই। রাজনৈতিক নেতাদের জন্য এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আজকে যারা মারা গেছেন তাদের অবদান রয়েছে যে কারণে আমরা এতদূর আসতে পেরেছি।
শোক প্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওয়সিকা আয়শা খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাজ্জাদুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল, আশরাফ আলী খান খসরু, আব্দুল আজিজ, মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।