বহিষ্কারেও থামছে না বিএনপির ‘অবাধ্য’ নেতাকর্মীদের অপকর্ম

উজ্জ্বল দত্ত : দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের নীতি পরিপন্থি কর্মকাণ্ড, সংস্কৃতি কর্মীদের উপর হামলা, সরকারি জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইকোনমিক জোনের কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়ে ক্যাটারিং ব্যবসা আদায়, গ্রুপিং বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম থেকে বিএনপির ডজন খানেক নেতাকে বহিস্কার করা হয়েছে। তবে অপকর্মকারীদেরকে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও তাতে তেমন সুফল পাচ্ছে না দলটি। বহিস্কারের বিষয়টিকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অঙ্গ মনে করে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিতেও বিএনপি নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে দলের নেতারা।

তোতন ও শাহ আলম বহিস্কার

রেলের জায়গা দখল, সরকারি মালামাল চুরির আধিপত্য, চাঁদাবাজি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় খুলশী থানার সেগুনবাগান এলাকায় থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক ও থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলমের অনুসারীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ওমর ফারুক নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে খোদা তোতনের অনুসারী। এই অভিযোগে ২৬ অক্টোবর রাতেই নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শাহ আলমকে বহিস্কার করা হয়। ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে খোদা তোতনকে বহিষ্কার করে নগর বিএনপি।

আনোয়ারার ইলিয়াছ কাঞ্চন বহিস্কার 

খাবার সরবরাহের কাজ পেতে ২১ অক্টোবর সোমবার বিকেলে কেইপিজেড শিল্পাঞ্চলে আমেরিকান অ্যান্ড ইফার্ড (বাংলাদেশ) কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শেগুফতা গনি নামে নারী কর্মকর্তাকে হুমকি দেন আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি নেতা ইলিয়াছ কাঞ্চন। এই ঘটনায় ২৫ অক্টোবর শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ–দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অভিযুক্ত ইলিয়াছ কাঞ্চনকে বহিস্কার করা হয়েছে।

চান্দগাঁওয়ের মোশাররফ হোসাইন ও নুরুল আমিন বহিস্কার 

২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদা এলাকায় স্পোর্টস কমপ্লেক্স জোন নামে একটি টার্ফের ব্যবসা দখল নিয়ে নগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন গ্রুপ ও নগর যুবদলের কৃষি সম্পাদক নুরুল আমিন গ্রুপের সংঘর্ষ বাঁধে। দুপক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রদলকর্মী জুবায়ের উদ্দিন ওরফে বাবু নিহত হন। নিহত বাবু মোশাররফ হোসাইনের অনুসারী ছিলেন। ঘটনায় জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে মোশাররফ হোসাইন এবং নুরুল আমিনকে যুবদল থেকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।

পটিয়ার মামুনুর রশিদ মামুন বহিস্কার 

২৭ আগষ্ট দুপুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া বাইপাস ফারুকি পাড়া পয়েন্টে পূরবী পরিবহনের গাড়ি আটকিয়ে রুপন দাশ নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় পটিয়া পৌর যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মামুনর রশিদ মামুন। মামুনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় ‍উঠে রাজনীতিপাড়ায়। পরবর্তীতে ৬ সেপ্টেম্বর তাকে কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশে বহিস্কার করা হয়।

যুবদলের আলাউদ্দিন বহিস্কার 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ আগষ্ট সন্ধ্যায় চেরাগী চত্বরে অনুষ্ঠিত সংস্কৃতিকর্মীদের প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচিতে হামলা করে কোতোয়ালি থানা যুবদলের নেতাকর্মীরা। কোতোয়ালি থানা যুবদলের বহিস্কৃত নেতা এমএ জলিল ও যুবদল নেতা আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। এসময় ঘটনার ছবি তুলতে গেলে প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক জুয়েল শীল ও দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ফটোসাংবাদিক এস এম তামান্নাকে মারধর করে এবং ক্যামেরা ভেঙে দেয় যুবদলের নেতাকর্মীরা। তবে জানা যায়, অভিযুক্ত এমএ জলিলকে এক বছর আগে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আলাউদ্দিনকে এই ঘটনায় অভিযোগে বহিস্কার করা হয়।

সীতাকুণ্ডের ফজলুল করিম চৌধুরী বহিস্কার 

৭ সেপ্টেম্বর বন্দর থেকে খালাস করে পোর্ট কানেক্টিং রোড দিয়ে আমদানি করা লোহার স্ক্র্যাপ নিয়ে যাচ্ছিল আবুল খায়ের কোম্পানির (একেএস) একটি ট্রাক। এসময় চলন্ত ট্রাকের পিছনে উঠে কিছু পথশিশু ও ছেলে ট্রাক থেকে স্ক্র্যাপ লোহা রাস্তায় ফেলছিল। বিষয়টি ড্রাইভার ও হেলপারের চোখে পড়লে ওয়াপদা এলাকায় গাড়ি থামিয়ে স্ক্র্যাপ চোর পথশিশু ও ছেলেগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সেখানে হাজির হন সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফজলুল করিম চৌধুরী। পথশিশুদেরকে রক্ষা করার জন্য তিনি ড্রাইভারের সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। বিতন্ডার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে হালিশহর থানার টহল পুলিশ হাজির হলে পুলিশের সঙ্গেও বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে ফজলুল। নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয় দিয়ে ফজলুল চৌধুরী বিরূপ আচরণ শুরু করলে পুলিশ বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানায়। সেনাবাহিনী এসে ফজলুল করিম চৌধুরীকে আটক করে নিয়ে যায়। ট্রাক থেকে স্ক্র্যাপ লোহা চুরির ঘটনার অভিযোগে এই ফজলুল করিম চৌধুরীকেও দল থেকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল।

এ বিষয়ে বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী চাটগাঁ নিউজকে বলেন, ক্রান্তিকাল পার করে দল এখন একটি অবস্থানে এসেছে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা পলাতক থাকলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমাদের কর্মীদের সাথে মিশে তাদের মিসগাইড করে নানা অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এই ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যেকোন অভিযোগে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপি এই ব্যাপারে হার্ডলাইনে আছে। বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, আমরা তা শক্ত হাতে মোকাবেলা করব। বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না। তবে নেতাকর্মীদেরকেও বহিস্কৃতদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার করে আমরা সম্মিলিত ঐক্যের ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে যাব।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top