ইফতেকার নুর তিশন : বন্দর নগরীতে যাত্রীদের ভোগান্তি দুর করতে এবার চালু হল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস সার্ভিস।শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেডের ‘চট্টলার চাকা’ নামে এই এসি বাস আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে চালু হচ্ছে।
আজ সোমবার (১ জুলাই) নগরীর হোটেল আগ্রাবাদের ইছামতি হলে এ বাস সার্ভিসের উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
জানা গেছে, ৩৮ আসনের হলুদ রঙের বাসগুলো কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত প্রতিদিন যাতায়াত করবে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা নির্দিষ্ট কাউন্টারের মাধ্যমে বাসগুলো চলাচল করবে। শহরের দুই প্রান্ত থেকে প্রতিটি ৩০ মিনিট পর পর ৫টি করে মোট ১০টি বাস চলাচল করবে।
অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টলা চাকা সার্ভিস পরিবহন সেক্টরে নতুন সংযোজন এবং সাহসী পদক্ষেপ। যে দেশের কমিউনিকেশন যত উন্নত সে দেশের অর্থনীতি তত সমৃদ্ধ। আজকে চট্টগ্রাম পরিবরহন জগত আরও এগিয়ে গেল।
পরিবহনের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শুধু পুলিশ ডিপার্টমেন্টে বা সিটি করপোরেশনের নয়। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
পরিবহন ব্যবস্থার নাজুক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে পরিবহন মালিকদের উদ্দেশ্য করে মেয়র বলেন, ‘অনেককে আক্ষেপ করে বলতে শুনি, শহরে এখনো লক্কর-ঝক্কর গাড়ি চলে। এমনও আছে বাসের বডি ভেঙ্গে রাস্তার সাথে মিশে যাচ্ছে। সেই গাড়িও চলে। কেন সেই গাড়ি চলে? একটা সুন্দর পরিনহন যদি একই ভাড়া দিয়ে রোডে চালাতে পারে তাহলে ওই মালিক কেন ওই পরিবহন লক্করজ-ঝক্কর বাস চালাবে। যাত্রীদের সেবা দূর, এমন হলে তা বোধহয় বিরক্তিতে রুপ নেবে। আমি আহ্বান জানাবো আমাদের গণপরিহন আমরা সুন্দর কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে গণপরিবহন আরো সমৃদ্ধ হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘আজকে যারা আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই বাস সার্ভিস নিয়ে এসেছেন তাদেকে অভিনন্দন জানাই। মানুষের চাহিদা এবং সামর্থ্য আছে, কিন্তু নগরীতে সেরকম যান না থাকার কারণে তাদের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। আমি আশা করছি এই বাস সার্ভিসের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে। আর যারা সামর্থ্যবান আছেন তারা এই ব্যবসায় নেমে আসবেন। আধুনিক বাস আসলে লক্কর-ঝক্কর বাস এমনিতেই বাদ পরে যাবে।’
অনুষ্ঠান শেষে সভাপতির বক্তব্যে শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টলার চাকা চট্টগ্রাম শহরে আমরা চালু করেছি। আমি আশ্বস্ত করতে পারি পরিবহন সেক্টরকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। শান্তি এক্সপ্রেস সবসময় সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা ১১টি গাড়ির পারমিট পেয়েছি। ইতোমধ্যে চালকদের পরীক্ষা নিয়ে তাদের নিয়োগ দিয়েছি। আমাদের ৪ জন চালক সবসময় স্ট্যান্ডবাই থাকবে। যাতে চালক সংকট না হয়। তাছাড়া চালকদের জন্য নির্ধারিত ড্রেস থাকবে। নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গাড়ি ছাড়া হবে। কোনো যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না এবং সিটের বাইরে যাত্রী নেওয়া হবে না। অ্যাপ্সের মাধ্যমে ই-টিকেটের মাধ্যমে টিকেট গ্রহণ করবে যাত্রীরা। আমি আশ্বস্ত করতে পারি চট্টগ্রাম সিটিকে সুন্দর নগরীকে পরিণত করার জন্য আমরা কাজ করবো। যেন মানুষ বলতে না পারে চট্টগ্রামের পরিবহণের বেহাল দশা।’
শান্তি এক্সপ্রেস (প্রাঃ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘কাউন্টারগুলো যাত্রীর চাপ অনুযায়ী হলুদ এবং লাল ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেওয়া হবে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে হাফ ভাড়া নেওয়ার প্রজ্ঞাপন না থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কার্ড সিস্টেম করা হবে। ওই কার্ড দিয়ে যাতায়াত করলে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণে ভাড়া ছাড় পাবে।’
এর আগে আরও বক্তব্য রাখেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, নগর পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. তারেক আহম্মেদ, চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র পরিচালক ও মেট্রো আরটিসির সদস্য সচিব মো. মাসুদ আলম, নিটল মোটরস লিমিটেডের সেলস ও মার্কেট বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানবীর শহীদ এবং অন্যান্য পরিবহন নেতারা।
অনুষ্ঠান শেষে হোটেল আগ্রাবাদের সামনে ফিতা কেটে এ বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ অন্যান্য অতিথিরা।
এর আগে ২০১৬ সালে ৬টি বাস দিয়ে নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত ১৪ নম্বর রুটে এসি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয় প্রিমিয়ার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান। তবে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরুর আগেই উদ্যোগটি ভেস্তে যায়।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস