বন্দর চেয়ারম্যানের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, তদন্তে দুদক

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ক্ষমতার অপব্যবহার, মানিলন্ডারিং, হাজার কোটি টাকার অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বর্তমানে সরকারি সফরে বিদেশে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, অনুসন্ধান করার জন্য দুদকের সহকারী পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৫) মো. নওশাদ আলী ও উপসহকারী পরিচালক মো. ইমরান আজানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মনিরুজ্জামানের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। নির্বাচন কমিশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ একাধিক সংস্থার কাছে চাওয়া হয়েছে তথ্য।

যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- কর্নফুলী নদীর ড্রেজিং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনুমোদনপত্র আর্থিক বরাদ্দপত্র টেন্ডার ডকুমেন্ট, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, দাখিল করা দরপত্র, দরপত্র উন্মুক্ত ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, চুক্তি, বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন, বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিল-ভাউচারসহ সংশ্লিষ্ট সব রেকর্ডপত্র, এস এম মনিরুজ্জামানের ব্যক্তিগত নথির ছায়ালিপি ও এসএম মনিরুজ্জামান তার স্ত্রী এবং সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধন/পাসপোর্টের সত্যায়িত ছায়ালিপি।

দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযোগের সুষ্ঠু ও গভীর তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র অত্যন্ত জরুরি।

এছাড়া চেয়ারম্যানের স্ত্রী আইরিন জামান ও দুই ছেলে মুহতাসিম ইয়াসার ও সারান ইয়াসারের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধনের সত্যায়িত কপিও চেয়েছে দুদক। এসব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি আগামী আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে দুদকে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এস এম মনিরুজ্জামানের নামে অভিযোগের বিষয়ে দুদকের চিঠিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, মানিলন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নিম্নবর্ণিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

দুর্নীতির দায়ে সাবেক চেয়ারম্যান কারাগারে
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি, জোরপূর্বক গুম এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে গত বছরের ২০ আগস্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

স্থলাভিষিক্ত
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল কারাগারে যাওয়ার পর গত বছরের ১১ আগস্ট তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে যোগ দেওয়ার আগে শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিইডব্লিউ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেনা কল্যাণ সংস্থার ডিজিএমআইএস এবং কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের চিফ স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

৭২টি অনিয়ম চিহ্নিত
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) দপ্তরের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে প্রায় ১ হাজার ৩১৪ কোটি টাকার ৭২টি বড় ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি অনিয়ম রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অনিয়মগুলো হয়েছে দরপত্র কারসাজি ও চুক্তি ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের মাধ্যমে।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top