আনোয়ারা প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজলোয় চলে আসছিল হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের জেরে এ দুই উপজেলায় প্রাণ গেছে অন্তত ২২ জনের। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন। দেয়াং পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতির পালের তাণ্ডবে আতংকে দিনাতিপাত করতো উক্ত দুই উপজেলার বাসিন্দারা। গেল ৭ বছর ধরেই বন্যহাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত ও অতিষ্ট তারা।
তবে আজ রোববার (১৩ এপ্রিল) ভোরে হাতিগুলো বাঁশখালীর বনে ফিরে গেছেন বলে দাবী করেছেন বনবিভাগ ও স্থানীয়রা।
রোববার সকাল থেকে বনবিভাগ ও স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাতি চলে যাওয়ার বিভিন্ন ভিডিও প্রচার করে। প্রায় ৭ বছর পর একসঙ্গে তিনটি হাতি চলে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরছে স্থানীয়দের মাঝে। এদিকে হাতিগুলো যাতে সহজে ফিরতে না পারে সেজন্য ইআরটি টিমের সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ।
বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, গত দুই-একদিন আগে দুইটি হাতি বাঁশখালীতে চলে আসে। বাকি একটি হাতিকে আমাদের ইআরটি টিম কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন কৌশলে রোববার ভোরে দিকে তৈলারদ্বীপ হয়ে বাঁশখালী বনে নিয়ে আসে। হাতি ফিরে আসতে চাইলে কারও আটকানোর সাধ্য নেই। তবে হাতিগুলো যাতে খুব সহজেই ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তৈলারদ্বীপ সেতু এলাকায় ইআরটি টিমের সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েকদিন আগে দুটি হাতি কেইপিজেড থেকে বাঁশখালীর বনে চলে যায়, যেখান থেকে হাতিগুলো এসেছিলো। আর একটি হাতি ছিলো, সেটিকে বনবিভাগের ইআরটি টিমের প্রচেষ্টায় বাঁশখালীর বনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিগত এক যুগ আগে থেকে বন্যহাতির দল কেইপিজেডের পাহাড়ে অবস্থান নেন। সেই সময় কয়েকদিন ঘুরে ফিরে চলে গেলেও ২০১৮ সাল থেকে হাতিগুলো কেইপিজেড, দেয়াং পাহাড়ে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। হাতির আক্রমণে ৭ বছরে নারী-শিশুসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। হাতির পালটি আনোয়ারার বটতলী হাজীগাঁও ও কর্ণফুলীর কেইপিজেডের দেয়াং পাহাড়, হৃদ ও বন ঘেরা জায়গায় বিচরণ করত। বিভিন্ন সময়ে গভীর রাতেও টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত অ্যাপ্রোচ রোডের পশ্চিম বৈরাগ অংশ পার হতে দেখা যায় তিনটি হাতিকে।
সর্বশেষ গত (২১ মার্চ) কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইনিয়নের শাহমীরপুর জমাদার পাড়ায় হাতির আক্রমণে তিনমাসের এক শিশু নিহত হয়। এতে ওই দিন সকালে শিশুর লাশ নিয়ে পিএবি সড়কে আন্দোলনে নামেন স্থানীয়রা। একই স্থানে পরপর দুইবার স্থানীয়রা আন্দোলনে নামলে চলতি বছরের ঈদুল ফিতরের পরে হাতিগুলো সরিয়ে নিতে সব পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে ঈদের পর আজ রবিবার তান্ডব চালানো তিন হাতি বাঁশখালী বনে ফিরে গেছে বলে দাবী করেন বনবিভাগ।
এদিকে হাতির বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় একশতের বেশি জিডি-অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনির হোসেন।
ইআরটি টিম লিডার এইচএম হাশেম চাটগাঁ নিউজকে বলেন, পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া তিনটি হাতির মধ্যে দুইটি কয়েকদিন আগে এবং অপরটি রোববার ভোরে তৈলারদ্বীপ সেতু হয়ে বাঁশখালীর দিকে চলে যায়।
চাটগাঁ নিউজ/সাজ্জাদ/জেএইচ