রাঙামাটি প্রতিনিধি: সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারি সিন্ডিকেট চক্র কর্তৃক প্রতিনিয়তই অবৈধভাবে গাছ কেটে পাচারের ফলে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে দেশের অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম সংরক্ষিত বনাঞ্চল পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সাম্প্রতিক সময়ে কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত পাবলাখালি রেঞ্জের হ্রদ লাগোয়া পাহাড়গুলো থেকে একের পর এক মূল্যবান সেগুন কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারিরা।
পাবলাখালির স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে ৫০ বছরেরও অধিক বয়সী অন্তত ২০টি সেগুন কাছ কেটে নিয়ে গেছে কাঠচোর সিন্ডিকেট চক্র। কেটে নেওয়া এসব গাছ চিরাই করে বাজারজাত করার কাজে পাবলাখালী রেঞ্জের নিকটেই স্থাপন করা হয়েছে অন্তত ১০/১২টি অবৈধ করাত কল। অনুমোদনবিহীন এসব করাত কলেই চিড়াই করা হয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চুরি করে আনা সেগুন, আকাশমনি থেকে শুরু করে শতবর্ষী বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। এসব বিষয়ের তথ্যাদি সত্যতাও নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনবিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র।
এদিকে, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বুধবার সারাদিন পাবলাখালীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
লংগদুস্থ রাজনগর বিজিবি জোনের সহায়তা নিয়ে পরিচালিত এই অভিযানে পাবলাখালির সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে দুইটি অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ ও ৫০ ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তর বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) ৩৭ ব্যাটালিয়নের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
রাঙামাটি উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানিয়েছেন,‘বেআইনীভাবে পাবলাখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বন ঘেষে করাতকল স্থাপন ও পরিচালনার অভিযোগে ২টি অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করা হয়।
বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করাতকল বিধিমালা-২০১২ এর সেকশন ৭(ক) অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন অবৈধ হলেও উমাচরণ চাকমা ও পলিন বিকাশ চাকমা নামে দুই ব্যবসায়ী করাতকল স্থাপন ও পরিচালনা করে আসছে। এসময় করাত কল উচ্ছেদের পাশাপাশি ৫০ঘন ফুট কাঠও জব্দ করা হয়।’
এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে পাবলাখালীর সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে দিনে-দুপুরে সেগুনসহ মূল্যবান গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ইউনিটের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ মাহমুদুল হাসান কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে স্মারক নাম্বার-২২.০১.০০০০.০১.০১১.১৬৭.(পার্ট-৬)২০১৭.৪৮৫ মূলে বিষয়টি তদন্ত করে রাঙামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষকের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তন বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।