বদলে যাচ্ছে প্রাথমিকের পাঠ্যবই

বিলম্বিত বিতরণের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছর থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছিল। সেই অনুযায়ী চলতি বছরও প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে গণ অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে যায়।

২০১২ সালে প্রণীত কারিকুলামের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে বিগত সরকারের পরিবর্তনকৃত শিক্ষাক্রম পুরোটা বদলে ফেলার সময় হাতে পাচ্ছে না সরকার। তাই আপাতত প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইগুলো পরিমার্জন করে বই ছাপানোর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তবে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই ছাপাতে গিয়ে বেকায়দার পড়ে গেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যেহেতু আগামী জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে বই বিতরণ। তবে বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। তবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিলম্বিত বিতরণ হলেও শিক্ষার্থীরা এবার নিরপেক্ষ, যুগোপযোগী ও সার্বজনীন পাঠ্যবই হাতে পেতে যাচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরের বাংলা ও ইংরেজি বই থেকে সাতটি গদ্য ও পদ্য বাদ দেওয়া হচ্ছে। আর নতুন করে ৮টি গদ্য ও পদ্য যুক্ত হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তিনটি গদ্য, একটি পদ্য ও একটি জীবনী বাদ দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণির একটি বই থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী বাদ দিয়ে সেখানে জাতীয় চার নেতার জীবনী যোগ করা হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা ইংরেজি গদ্যও বাদ দেওয়া হচ্ছে।

যেসব বিষয় বাদ ও যুক্ত হচ্ছে: 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে পিঁপড়া ও পায়রার গল্প। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়’ অধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ করা হয়েছে। অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ দিয়ে। নতুন বইয়ে এসব বাদ পড়ছে। এই অধ্যায় শুরু করা হয়েছে ২৫ মার্চের ইতিহাস দিয়ে। এখানে সম্বলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও বাদ দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া অনেক অধ্যায়ে উদাহরণের পরেও সেই জিনিসের পরিচয় আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন— অ-তে অশোক ফুল ফুটেছে ভাই। এরপর লেখা হয়েছে অশোক একটি ফুলের নাম। উদাহরণের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন লেখায়ও পরিবর্তন এসেছে। যেমন আগে ছিল শৈবাল ভাসে। সেটিকে এখন লেখা হয়েছে নদীতে শৈবাল ভাসে। বিভিন্ন অধ্যায়ে সংক্ষিপ্ত লেখাকে বোঝার সুবিধার্থে বড় করা হয়েছে।

দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে সিংহ আর ইঁদুরের গল্প নতুন করে যোগ হয়েছে। এ ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা ‘সোনার ছেলে’ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজী নজরুল ইসলামের ওপর লেখা ‘দুখু মিয়ার জীবন’ যোগ করা হয়েছে। ‘পহেলা বৈশাখ’ শীর্ষক গদ্যের নাম পরিবর্তন করে ‘নববর্ষ’ রাখা হয়েছে। এই গল্পের লেখায়ও পরিবর্তন এসেছে। গল্পগুলোতে সম্বলিত পদ্মা সেতুর ছবিসহ কয়েকটি ছবিও পরিবর্তন করা হচ্ছে। তবে দুটি শ্রেণির ইংরেজি ও গণিত বইয়ে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।

তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে ‘ঘাসফড়িং ও পিঁপড়ার গল্প’ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা’। বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গদ্য ‘সেই সাহসী ছেলে’। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ‘আমাদের জাতির পিতা’ বাদ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে যাচ্ছে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে লেখা ‘আমাদের চার নেতা’। ইংরেজি বইয়ের শেষ অধ্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের জীবনী নিয়ে লেখা গদ্য ‘অ্যা ওয়ান্ডারফুল বয়’ বাদ যাচ্ছে।

চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বই থেকে বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মমতাজউদ্দিনের লেখা ‘বাংলার খোকা’ এবং নির্মলেন্দু গুণের লেখা কবিতা ‘মুজিব মানে মুক্তি’। যোগ হচ্ছে ‘টুনুর কথা’ ও রজনীকান্ত সেনের কবিতা ‘স্বাধীনতার সুখ’। এ ছাড়া ‘মোবাইল ফোন’ নামক গদ্য বাদ যাচ্ছে। সেখানে যুক্ত হচ্ছে ‘বই পড়তে অনেক মজা’।

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের প্রসঙ্গ কথা বাদ যাচ্ছে। এই বইয়ে সূচিপত্র ও অধ্যায়ে সম্বলিত কিছু শব্দ পরিমার্জন ও অনুচ্ছেদে পংক্তি সংযোজিত হবে।

চতুর্থ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইবাদত অংশে ‘ঈদুল ফিতরের’ জায়গায় ‘ঈদুল ফিতর’, চতুর্থ অধ্যায়ের আরবি বর্ণমালা অংশের আটটি বর্ণের উচ্চারণে পরিবর্তন এবং পঞ্চম অধ্যায়ে নবী ও রাসুলদের পরিচয় অংশে সুরা আলাকের অর্থে ‘পড়ো, আর তোমার রব মহিমান্বিত’—করা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির বই এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। সেখানে নতুন করে স্থান পাচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু। এর বাইরে সূচিতে তেমন কোনো সংযোজন-বিয়োজন নেই।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন যে, গত বছরের কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। নতুন কারিকুলামে ইতিহাসের অনেক বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয় নাই।

২০১২ সাল থেকে ২০২২ সালের যে কারিকুলাম সেখান থেকে অনেক কিছু বাদ দেয়া হয়েছিল। উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আগের কারিকুলাম অনুসরণ করে পাঠ্যবইয়ে পরিমার্জন করার উদ্যোগ নিয়েছি। পাঠ্যবইয়ে জুলাই অভ্যুত্থান ও গ্রাফিতির ছবি সংযোজিত হচ্ছে। আশা করি, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এতে উপকৃত হবেন।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/জেএইচ

Scroll to Top