সিপ্লাস ডেস্ক: কোনোভাবেই বাড়ানো যাচ্ছে না রেমিট্যান্স প্রবাহ। আগের তুলনায় ডলারের দাম বৃদ্ধি ও প্রণোদনা ঘোষণা করেও কমছে না হুন্ডির দৌরাত্ম।
সদ্যসমাপ্ত আগস্টে প্রবাসীরা প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় (এক ডলার সমান ১০৯ টাকা ধরে) এ অঙ্ক ১৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ২০৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ৪৩ কোটি ডলার কমেছে।
অবশ্য দুই মাস আগের ব্যবধান আরও বেশি। তখন এসেছিল প্রায় ২২০ কোটি ডলার। সে তুলনায় বিদায়ি মাসে কমেছে ৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চিত্র।
জুনে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। একক মাস হিসাবে তিন বছরের মধ্যে যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই মাসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা প্রায় ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে।
পরের মাসেই (জুলাই) কমে যায় প্রবাসী আয়ের সেই প্রবাহ। জুলাই শেষে দেশে আসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আগস্টে রেমিট্যান্স আরও নিম্নমুখী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা জুন ও জুলাইয়ের চেয়ে অনেক কম।
আলোচিত সময়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৭ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ লাখ ১০ হাজার ডলার।
তবে আলোচিত সময়ে সাত ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) এবং বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।
বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এর আগে সদ্যবিদায়ি জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আগের মাস জুনের তুলনায় প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। জুনে রেকর্ড পরিমাণ ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। একক মাস হিসাবে যেটি ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী অর্থবছরে (২০২২-২৩) ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম দুই মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ এবং আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। টানা পাঁচ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে আর যেতে পারেনি।
সেপ্টেম্বরে আসে ১৫৪ কোটি, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ, জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে আসে ১৫৬ কোটি ডলার।
গত মার্চে এসেছিল ২০২ কোটি ২৪ লাখ, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ এবং মে মাসে ১৬৯ কোটি ডলার আসে। সবশেষ ঈদুল-আজহাকে কেন্দ্র করে জুনে রেমিট্যান্স বাড়ে। আর সদ্যবিদায়ী আগস্টে এলো ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার।