নিজস্ব প্রতিবেদক : গেল বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় যাত্রী নিরাপত্তায় নাশকতা এড়াতে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে স্থাপন করা হয় বেশকিছু সিসি ক্যামেরা। রেল কর্তৃপক্ষের ত্বত্তাবধানে রেলওয়ে পুলিশ এমন উদ্যোগ হাতে নেয়। তবে বছর ঘুরতেই হাওয়া ট্রেনে বসানো সিসি ক্যামেরা। যে কয়টি আছে তাও এখন অকেজো। একসময় প্রসংশা কুড়ানো এই উদ্যোগ বর্তমানে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দারুন প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিকে, নিরাপদ ভ্রমণের লক্ষ্যে সর্বশেষ আমদানি করা মিটারগেজ কোরিয়ান কোচ ও ব্রডগেজ চাইনিজ কোচে যুক্ত ছিল সিসি ক্যামেরা। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানীকৃত অত্যাধুনিক কোচের সমন্বয়ে রিপ্লেস করা হয়েছে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে। অত্যাধুনিক ফিচারের মধ্যে রয়েছে অটোমেটিক স্লাইডিং ডোর, প্রতিটি কোচে রয়েছে সিসি ক্যামেরা, অত্যাধুনিক বায়ো টয়লেট, চার্জিং ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক লাইটিং ব্যাবস্থা। তবে কোনো এক অজানা কারণে এইসব সিসি ক্যামেরার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছেন না রেল কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লষ্টরা বলছেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেল সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে ট্রেনে বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ফলে কমতে শুরু করেছিল ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা।
এই ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইল স্টেশনে ‘টাঙ্গাইল কমিউটার’ ট্রেনে আগুন, ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ী স্টেশনে ‘যমুনা এক্সপ্রেস’ এবং ২২ নভেম্বর সিলেটে ‘উপবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ১৩ ডিসেম্বর রাজেন্দ্রপুর এলাকায়, যেখানে রেললাইন কেটে ফেলায় ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সর্বশেষ গেল বছরের ৫ জানুয়ারি রাতে দুবৃর্ত্তদের দেওয়া আগুনে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনের দুইটি কোচ ও পাওয়ার কারের আংশিক পুড়ে যায়, এই ঘটনায় চারজন নিহত হন। এসব ঘটনার পর যাত্রীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিকাণ্ডের এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ভীত যাত্রীরা জানান, ট্রেনে উঠলে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেন। এছাড়াও রয়েছে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির উপদ্রব।
মারুফ হাসান নামের একজন যাত্রী বলেন, ছোট্ট একটি সিসি ক্যামেরার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে ট্রেনে দুর্নীতি-অনিয়ম, চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির উপদ্রব অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়াও রেল যাত্রায় নিরাপত্তার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে আগের চাইতে কয়েকগুণ।
এ বিষয়ে রওশন আরা নামের একজন ট্রেন যাত্রী বলেন, ট্রেনে ভ্রমণ করতে বেশ ভালো লাগে। তবে পূর্বের বিভিন্ন ঘটনায় এখন আমি বেশ আতঙ্কিত। ট্রেনে উঠলেই মনে হয় এই বুঝি কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। আগুনের ঘটনা বন্ধ হলেও চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই তো আছেই!যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনে নিয়মিত তদারকি করা জরুরি। ক্যামেরা লাগিয়ে দিলাম, কিন্তু পর্যবেক্ষণ করলাম না এমন হলে হবে না। মূলত ট্রেন নয়, সম্পূর্ণ রেলওয়েতেই কার্যকর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি রেলওয়ের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
ট্রেনে সিসি ক্যামেরা বিকল হওয়ার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ জানান, সিসি ক্যামেরার নেটওয়ার্কিং ক্যাবল মানুষের হাতের কাছে থাকার কারণে তা সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা ইনচার্জ (ওসি) এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে রেলওয়ে পুলিশের উদ্যোগে বেশকিছু ট্রেনে ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল, যা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উপর। তবে বিভিন্ন কারণে ট্রেনে লাগানো সবগুলো ক্যামেরাই এখন বন্ধ ও অকেজো। কেন অকেজো কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীন বলেন, দুর্ঘটনা ও যাত্রী নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি। সিসি ক্যামেরার বিষয়টিও দেখছি, চলন্ত ট্রেনে ক্যামেরার নেটওয়ার্ক নিয়েও কিছু জটিলতা আছে। আমরা সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ