চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে ২৩টি গাড়ির টোলমুক্ত সুবিধা চেয়েছে সড়ক ও সেতু বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দিতে চারটি গাড়ি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতে টোল ফ্রি চেয়ে সম্প্রতি সড়ক ও সেতু বিভাগে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এসএম মোস্তাইন হোসাইন।
উপ-কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, ‘টানেলে সহজে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিএমপির ট্রাফিক ও ক্রাইম বিভাগের বন্দর জোনের ২৩টি গাড়ির টোলমুক্ত রাখার জন্য সড়ক ও সেতু বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে জানুয়ারির শেষ দিকে চিঠি পাঠানো হলেও এখনো কোনো জবাব পাওয়া যায়নি বলে এ কর্মকর্তা জানান।
তিনি জানান, টানেলের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে নৌবাহিনী। কিন্তু টানেলের অভ্যন্তরে দুর্ঘটনাসহ নানা বিষয়ে আইনগত কাজ করে পুলিশ। টানেলের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার জন্য পুলিশকে ডাকা হয়। পতেঙ্গা ও কর্ণফুলী থানার ওসির গাড়ি ছাড়া পুলিশের যেসব গাড়ি টানেলে প্রবেশ করে সেগুলোকে দুই দফায় (প্রবেশ ও বাহির) টোল পরিশোধ করতে হয়।’
‘যেসব কর্মকর্তার গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে টানেলে যাবে, সেগুলো টোলের আওতায় থাকবে; যেসব গাড়ি অপারেশনাল কাজে থাকবে সে ধরনের ২৩টি গাড়িতে টোলমুক্ত সুবিধা দিতে বলা হয়েছে।’
টোলমুক্ত সুবিধা চাওয়া এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে ট্রাফিক ও ক্রাইম বিভাগের বন্দর জোনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, টহল গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, রেকার ও ফোর্স আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। পাশাপাশি টানেলে যে কোনো দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তার কাজে দ্রুত সাড়া দিতে চারটি গাড়িও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
পুলিশের গাড়ির সংকটের কথা জানিয়ে মোস্তাইন বলেন, ‘আমাদের গাড়ির সংকট আছে। টানেলের অভ্যন্তরে কোনো ঘটনা ঘটলে থানা থেকে ফোর্স আসতে সময় লাগে, সেজন্য দুই প্রান্তে আমরা দুটি করে চারটি গাড়ি স্ট্যান্ডবাই রাখার জন্য বলেছি। যাতে যে কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্য পুলিশ দ্রুত মুভ করতে পারে। তাই টানেলের অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য ডাবল কেবিনের চারটি গাড়ি চাওয়া হয়েছে।’
টানেলে কোনো গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সেটি উদ্ধারে গেলে পুলিশকেও টোল দিতে হয়।
এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে একটি নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীতে বানানো হয়েছে এ টানেল। নির্মাণ কাজ করেছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড- সিসিসি’।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পের শুরুর দিকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। অনুমোদনের দুই বছর পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়।
এ টানেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে নৌবাহিনী। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি থানা নির্মাণের প্রস্তাব চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের ২৮ অক্টেবার টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সেটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। টানেল খোলার পর থেকে কার রেসিং, প্রাইভেটকারের পেছনে দ্রুত গতির বাসের ধাক্কা দেওয়া, টানেলের ভেতর সেলফি তোলা এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টোল প্লাজার ব্যারিয়ারে ধাক্কা দেওয়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
টানেল পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফা বলেন, বর্তমানে পতেঙ্গা, কর্ণফুলী এবং আনোয়ারা থানার ওসির গাড়ি তাৎক্ষণিকভাবে টোল ছাড়া প্রবেশ করতে পারে। অন্যসব গাড়ি টানেলে চলাচল করতে টোল পরিশোধ করতে হয়।
টোলমুক্ত ২৩টি গাড়ি চলাচলের আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুনেছি পুলিশের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ