সিপ্লাস ডেস্ক: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে যানবাহনের জন্য নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করে গাড়ি চালানোয় ৭ অজ্ঞাতনামা কার চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১ নভেম্বর) রাতে নগরীর কর্ণফুলী থানায় টানেল কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে সাতটি প্রাইভেট কারের নম্বর উল্লেখ করার পাশাপাশি আরো দুই থেকে তিনটি প্রাইভেট কারের চালকসহ তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ২৯ অক্টোবর রাত অনুমান ১১টায় ক্রসিং এলাকায় ৭ থেকে ১০টি প্রাইভেটকার নিয়ে অজ্ঞাতনামা চালক এবং তাদের সহযোগী পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন স্থানে টানেল কর্তৃপক্ষের সাঁটানো সাইনবোর্ডের সর্বোচ্চ গতিসীমা লঙ্ঘন করে। গাড়িগুলো রেসিং, ওভারটেকিং ও বিপজ্জনকভাবে চালানোসহ যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পরে গাড়িগুলোর অজ্ঞাতনামা চালক টোল পরিশোধ করে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে টানেলের ভেতর প্রবেশ করে।
পরে ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে সাতটি গাড়ির নম্বর শনাক্ত করে টানেলের সিসিটিভি মনিটরিং কর্তৃপক্ষ। আরও দুই-তিনটি প্রাইভেট কারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, কার রেসিংয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে টানেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর কার রেসিং প্রতিযোগিতার ঘটনায় টানেল কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
টানেলের ভেতরে কার রেসিংয়ের ভিডিওটি গত ৩০ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ‘দ্য স্লো কিডস’ নামে একটি পেজে টানেলের ভেতর ও বাইরে রেসের ভিডিওটি আপলোড করে তা হলিউড সিনেমা ‘দ্য ফাস্ট অ্যান্ড দ্য ফিউরিয়াস-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়।
১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সড়ক টানেলটি গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। চালুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৩টার দিকে একটি প্রাডো গাড়ি উচ্চগতির কারণে টানেলের টোল প্লাজায় ধাক্কা দিলে রেলিং কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর মূল টানেলের বাইরের সড়কে রেসিং কারকে স্টান্ট (গেম বিশেষ যেখানে গাড়ি শূন্যে উঠে পড়ে) করতে এবং টানেলের ভেতরে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ভিডিও ভাইরাল হয়। একইদিন বিকেলে টানেলের ভেতরে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলতে দেখা গেছে যায় সাতকানিয়ার এক জনপ্রতিনিধি ও এক ছাত্রলীগ নেতাকে। অথচ টানেলে গাড়ি থামানো এবং গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষেধ।
এছাড়া, গত মঙ্গলবার বিকালে একটি প্রাইভেট কারকে একটি মিনি বাস পেছনে ধাক্কা দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে টানেল কর্তৃপক্ষের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। টানেল কর্তৃপক্ষ প্রইভেট কার থেকে জরিমানা আদায় করেছে। এছাড়া টানেলের ভেতরে স্পিড ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টানেল কর্তৃপক্ষ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান পরামর্শক্রমে মোটরযানের গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করেন। এ বিষয়ে টানেলের প্রবেশ মুখ, ভেতরসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান স্থানে গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়।