ফের নগর আ.লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা, দুই নেতার পালটাপালটি

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ফের চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। চার দফা ঘোষণা দিয়েও ব্যর্থ হবার পর আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তবে সভায় নগর কমিটির দুই নেতার পালটাপালটি বক্তব্যে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বক্তব্যে বিভিন্ন সাংগঠনিক সভার তথ্য সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়া নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। তার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন তার বিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতারা। সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল এর প্রতিবাদ করে পালটা বক্তব্য দেন। এতে সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বেশি দূর গড়ায়নি।

সভায় বির্তকে জড়ানো দুই নেতাকে থামিয়ে দিয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন, সেটা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে, ব্যর্থ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সভানেত্রীর নির্দেশের কথা উল্লেখ করে সভায় আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে সর্বসম্মতিক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর নগর কমিটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব ইউনিট-ওয়ার্ডে এখনও সম্মেলন সম্পন্ন হয়নি, সেগুলো ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। শোকের মাস আগস্টকে বাদ রেখে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল থানা সম্মেলন শেষ করতে হবে।’

স্বপন আরও বলেন, ‘ইউনিট ও ওয়ার্ডের সম্মেলন করার জন্য নগর কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে থানাভিত্তিক ১৫টি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা যদি ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে সম্মেলন করতে অপারগ হন, তাহলে কমিটিগুলো বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।’

তিনি বলেন, ‘সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে তৃণমূল স্তরের নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো নেতা যদি ব্যর্থ হন, তার যোগ্যতা ও দক্ষতা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। এতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। দানু মারা যাওয়ার পর ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়, যাতে মহিউদ্দিনকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর প্রথম সহসভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর গতবছর তাকে ভারমুক্ত করা হয়।

২০২১ সালের শেষদিকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হয়। কিন্তু এ সম্মেলন নিয়ে নেতারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ফলে চট্টগ্রাম নগরীতে আওয়ামী লীগের ১৩২টি ইউনিট, ৪৪ ওয়ার্ড এবং ১৫টি সাংগঠনিক থানার মধ্যে শুধু কিছু ইউনিট এবং ওয়ার্ড ছাড়া আর কোথাও সম্মেলন সম্ভব হয়নি। তবে ওয়ার্ড-ইউনিটের সম্মেলনগুলো নিয়েও বিতর্ক আছে।

এ অবস্থায় দফায় দফায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সেটা হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালে ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও পরবর্তীতে ১৮ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ গত বছরের ৩১ জুলাই চার দফায় নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ সাংসদ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও শফিক আদনান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ হাসান মাহমুদ সমশের, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ হোসেন প্রমুখ।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top