ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীতে শ্রমিক ইউনিয়নের নাম ভাঙিয়ে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের জিম্মি করে প্রতিদিন লাখ টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। শহরের মহিপালের প্রবেশমুখে সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে এসব চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আর এ কাজে শ্রমিক ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতৃবৃন্দ ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত বুধবার মহিপাল ট্রাফিক অফিসের সামনে চাঁদা বন্ধের দাবিতে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
জানা গেছে, জেলা থেকে প্রতিদিন দাগনভূঞাঁ, সোনাগাজী, বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে প্রায় ৩ হাজারের অধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। তবে এসব সড়কে চলাচল করতে চালকদের প্রতিদিন দিতে হচ্ছে চাঁদা। অন্যথায় তাদের সিরিয়াল না দেয়াসহ কোনো সড়কেই চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে চালকরাও বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে থাকে।
সরেজমিন ফেনীর মহিপালে দাগনভূঞাঁ সিএনজি স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ৭-৮ জন লোক দুইভাবে বিভক্ত হয়ে সিএনজিগুলো থেকে চাঁদা নিচ্ছেন। এক ভাগের লোকজন নিজেদের পৌরসভার টোল আদায় করছেন বলে জানান, অপরপক্ষ অবৈধভাবে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সিএনজির শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ১০-২০ টাকা আদায় করছেন বলে জানান। তবে সবাই সিএনজি চালকদের টোকেন দিচ্ছেন।
ফেনী জেলা অটোটেম্পু- অটোরিকশা- সিএনজি ও মেক্সি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, মহিপাল- ফেনী নামে এ চাঁদা উঠানো হচ্ছে। এই সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ মকু মিয়া জানান, শ্রমিক সংগঠনের কল্যাণার্থে ও গাড়ির শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য এবং শ্রমিকদের পরিবারের সহযোগিতার জন্য এ চাঁদা ব্যবহার করা হয়। তবে তিনি যে সংগঠনের কথা উল্লেখ করেন সেই সংগঠনের কাগজপত্র দেখে জানা যায়, গত ২০২০ সালেই সেই সংগঠনের মেয়াদ শেষ এবং এই সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে দৈনিক ১০ টাকা হারে চাঁদা নেওয়ার কথা থাকলেও মূলত তাদের কোন সদস্যই করা হয়নি এবং এই সংগঠনের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে হাতে গোনা দুই একজন।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, শ্রমিকদের উপকার না হলেও নেতাদের ঠিকই উপকার হচ্ছে। তারা অনেকে বাড়ি-গাড়িও করেছেন এই চাঁদার টাকায়।
ফেনী পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সিএনজির একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড। সড়কের দুইপাশে, আনাচে-কানাচে অবৈধ স্ট্যান্ডের ছড়াছড়িতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। বেড়েছে জনগণের ভোগান্তি। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা।
পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে চলাচলের রাস্তা দখল করে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো যত্রতত্র বসিয়েছেন সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। প্রতিটি স্ট্যান্ডে পার্কিং করা যানবাহন থেকে নেওয়া হচ্ছে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা। চাঁদা দিতে না চাইলে সিরিয়াল বাতিল করে পরবর্তী স্ট্যান্ডে সিএনজি নিয়ে ঢুকতে নিষেধ করা হয়। এসব কারণে চালকরা চাঁদা দিতে বাধ্য হন। আর চাঁদার প্রভাব পড়ছে সাধারণ যাত্রীদের ওপর। বিষয়টি নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভায় আলোচনা হলেও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।
নিজেকে লাইনম্যান দাবি করে চাঁদা তুলছেন রুবেল, সালাউদ্দিন, মোর্শেদ, বেলাল ও দিদার। তাদের নেতৃত্বে এসব এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান সিএনজি স্ট্যান্ড।
এছাড়া যাবতীয় কাগজপত্র থাকলেও ট্রাফিক পুলিশের কথা বলে স্টিকার দিয়ে প্রতিমাসে হাতিয়ে নেন ৬০০ টাকা।
তাদের অভিযোগ, সিএনজি মালিক সমিতির হানিফ প্রভাবশালী নেতা ও ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখল করে ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশন নিয়ন্ত্রণ করছে।
হানিফের সাথে মাসিক চুক্তি করলেই তাদের দস্তখত সম্বলিত কিছু কার্ড ও স্টিকার দেন। আর ওই কার্ড দেখালে ও স্টিকার সিএনজির সামনের গ্লাসে লাগালেই রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজিগুলো ট্রাফিক পুলিশ অথবা অন্য যে কারো ঝামেলা ছাড়াই যেখানে-সেখানে গাড়ি চালানো যায়। তবে চুক্তিবিহীন সিএনজির রেজিস্ট্রেশন অথবা ফিটনেস ঠিক থাকলেও পদে পদে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে যতই সমস্যায় পড়ুক হানিফ ও তার নিয়োগকৃত লোকজনকে ফোন দিলেই নিমিষেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যায় বলে দাবি চালকদের।
এদিকে পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, শহরে পৌর টোল ছাড়া যদি অন্য কেউ রশিদ দিয়ে টাকা আদায় করে সেটা অবশ্যই অবৈধ। একাধিকবার চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। চালকরা অভিযোগ দিলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ