ফুরিয়ে আসছে তেলের মজুত, ডিসেম্বরে সংকটের আশঙ্কা!

আলমগীর  অপু : আমদানিকারকদের কাছে থাকা ভোজ্য তেলের মজুতে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নানা কারণে দেশের আমদানিকারকদের অনেকেই তেল আমদানি করতে পারছেন না। বাইরে থেকে যদি তেল না আসে তাহলে দেশে ভোজ্য তেলের সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাব পাস হওয়ার আগেই বাজারে বেড়ে গেছে তেলের দাম। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেড়েছে, সাথে ডলারের দামও!

সচেতনমহল মনে করছেন, তেলের বাজারের এই অনাগত অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম যেমন জরুরি, তেমনি দেশের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত তেলের সরবরাহও সচল রাখতে হবে। তা নাহলে তেল নিয়ে জবাবদিহিতায় পড়তে হতে পারে এই সরকারকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তেলের বাজার মূলত ছয় খেলোয়াড় নিয়ন্ত্রণ করে।  বসুন্ধরা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ বাংলাদেশে তেল আমদানি ও রিফাইনারি করে। তবে এস আলম গ্রুপ নিজেদের আমদানিকৃত তেল আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রি করবেন বলে জানা গেছে। তবে নানা জটিলতায় পড়ে বর্তমানে তেল আমদানি করার মত পরিস্থিতিতেও নেই অধিকাংশ আমদানিকারক। বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও সিটি গ্রুপও তেল আমদানি কি পরিমান করছে তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।  বর্তমানে তেল আমদানি প্রক্রিয়ায় সক্রিয় থাকার কথা শোনা যাচ্ছে একমাত্র টিকে গ্রুপ ও আবুল খায়ের গ্রুপ। এ অবস্থায় আমদানিকারকদের মধ্যে যে তেল মজুত রয়েছে তা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে তেলের বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

তেল আমদানিকারক সূত্রে জানা যায়, আমদানি প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। এলসি খোলা থেকে শুরু করে দেশে তেলের চালান আসা পর্যন্ত অনেক সময়ের ব্যাপার রয়েছে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় ২-৩ মাস সময় লেগে যায়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বিশ্ব ব্যাংকিং সেক্টরে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় তেল আমদানির ক্ষেত্রে এবার আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, আমদানিকারক বিশেষ করে এস আলম গ্রুপ আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় ভোজ্য তেলের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এখন যেটুকু আছে তা হয়তো চলতি নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত চলবে। এরপর ভয়াবহ সংকট শুরু হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে এনবিআরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমদানি শুল্ক অব্যাহতির ঘোষণা দিলে ব্যবসায়ীরা তেল আমদানিতে উৎসাহী হবে। নয়তো সংকট দিন দিন বাড়বে।

তারা বলেন, বিগত বছরগুলোতে এস আলম গ্রুপের নিজস্ব কিছু ম্যাকানিজমের কারণে তেলের বাজার অনেকটা স্বস্থির ছিল এবং ছোটখাটো আমদানিকারকরা এখানে আসতে ঝুঁকি মনে করতো। কেউ কেউ বলেছেন, এস আলম গ্রুপ তেলের বাজারে লাভ না করলেও সরকারি উচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে তা পুষিয়ে নিতো।

জানা গেছে, গত এপ্রিলে যখন সর্বশেষ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল তখন বিশ্ববাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম ছিল ৮৭৩ ডলার, এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২ ডলার। আর সে সময় প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ছিল ৯১০ ডলার, এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২৫ ডলার। তাই স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়ানো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ট্যারিফ কমিশনে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা এ দফায় বোতলজাত সয়াবিনে লিটারে ১২ টাকা, খোলা সয়াবিনে কেজিতে ১০ টাকা এবং পাম অয়েলে লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার আগেই বাজারে বেড়ে যায় তেলের দাম। কারণ প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরপরই ব্যবসায়ীরা বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। সরবরাহ কম থাকায় গত এক মাস ধরে বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের দামও বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, আমদানিতে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবিত শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত হলে ভোজ্য তেলের দাম আর বাড়বে না। তাদের দাবি, বিশ্ব বাজারে গত কয়েকমাস ধরে ধারাবাহিকভাবে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বেড়ে চলেছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের মূল্য ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আরবিডি পাম তেলের মূল্য ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। তাই তেল আমদানিকারকরা বলছেন, বিশ্ব বাজার পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য করে বাংলাদেশে তেলের দাম বাড়ানো হলে বাজার আরো অশান্ত হয়ে পড়বে। তাই তেলের দাম না বাড়িয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে দিলে সেক্ষেত্রে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।

রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান সরকারকে ওয়ান ইলেভেনের তিক্ত অভিজ্ঞতা মনে রেখে কাজ করতে হবে। তখন শুধু তেলের কারণেই তৎকালীন সরকার বেকায়দায় পড়েছিল ভীষণভাবে।

চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ

Scroll to Top