ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে কোরআনের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক: ফিলিস্তিন বরকতময় ভূমি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন- سُبْحٰنَ الَّذِيْۤ اَسْرٰي بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَي الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِيْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيٰتِنَا اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ ‘পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতারাতি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ০১)

এই বরকতময় ভূমি এবং এর মাজলুম অধিবাসীদের সুরক্ষার দায়িত্ব শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, বরং প্রত্যেক মুসলিমের। এ অধিকার মুসলমানদের আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- اُذِنَ لِلَّذِيْنَ يُقٰتَلُوْنَ بِاَنَّهُمْ ظُلِمُوْ، وَ اِنَّ اللهَ عَلٰي نَصْرِهِمْ لَقَدِيْرُ، ِالَّذِيْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ اِلَّاۤ اَنْ يَّقُوْلُوْا رَبُّنَا اللهُ ‘যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদেরকে অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে (তারা নিজেদের প্রতিরক্ষার্থে যুদ্ধ করতে পারে)। যেহেতু তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে জয়যুক্ত করতে পরিপূর্ণ সক্ষম। যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি হতে অন্যায়ভাবে কেবল এ কারণে বের করা হয়েছে যে, তারা বলেছিল, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ।’ (সুরা হজ: ৩৯-৪০)

আল্লাহ তাআলা আরও কঠিনভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন- وَ مَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَ الْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الْوِلْدَانِ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا وَ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا وَّ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا ‘(হে মুসলিমগণ!) তোমাদের জন্য এর কী বৈধতা আছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে সেইসকল অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করবে না, যারা দোয়া করছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে-যার অধিবাসীরা জালিম-অন্যত্র সরিয়ে নাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ হতে একজন অভিভাবক বানিয়ে দাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ হতে একজন সাহায্যকারী দাঁড় করিয়ে দাও ‘ (সুরা নিসা: ৭৫)

মনে রাখা জরুরি- ‘মুসলিম মুসলিমের ভাই’। এক মুসলিম জুলুমের শিকার হলে অন্য ভাইদের দায়িত্ব হয়ে যায়, তার পক্ষে দাঁড়ানো। অতএব, ফিলিস্তিনবাসীর পাশে দাঁড়ানো এখন বিশ্ব মুসলিমের কর্তব্য। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ، وَتَرَاحُمِهِمْ، وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَه سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى ‘পারস্পরিক ভালবাসা-সম্প্রীতি, দয়া-রহম, সহমর্মিতা ও সমব্যথী হওয়ার ক্ষেত্রে মুমিনদের দৃষ্টান্ত এক দেহের মতো, যার কোনো একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে বা অসুস্থ হলে পুরো দেহ নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে কাতর হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৬)

নবীজি আরও বলেছেন- المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُه وَلاَ يُسْلِمُه ‘মুসলিমগণ একে অপরের ভাই, কোনো মুসলিম অপর ভাইয়ের ওপর জুলুম করতে পারে না, তাকে শত্রুর মোকাবেলায় সহায়তা না করে সঙ্গহীন একা ছেড়ে দিতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি: ২৪৪২)

ভাইকে মাজলুম অবস্থায় শত্রুর হাতে ছেড়ে দেওয়া ভাইয়ের পরিচয় হতে পারে না। বরং মজলুম ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং জালেমের বিরুদ্ধে জান-মাল দিয়ে নামতে হবে। তাহলেই আল্লাহ খুশি হবেন এবং বিজয় দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْۤا اَنْصَارَ اللهِ كَمَا قَالَ عِيْسَي ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيّٖنَ مَنْ اَنْصَارِيْۤ اِلَي اللهِ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِ فَاٰمَنَتْ طَّآىِٕفَةٌ مِّنْۢ بَنِيْۤ اِسْرَآءِيْلَ وَ كَفَرَتْ طَّآىِٕفَةٌ فَاَيَّدْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا عَلٰي عَدُوِّهِمْ فَاَصْبَحُوْا ظٰهِرِيْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) হাওয়ারিদেরকে বলেছিলেন, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বলল, আমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী। তারপর বনী ইসরাইলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফর অবলম্বন করল। সুতরাং যারা ঈমান এনেছিল, আমি তাদেরকে তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করলাম, ফলে তারা বিজয়ী হল ‘ (সুরা সফ: ১৪)

আল্লাহ তআলা আরও ইরশাদ করেন- يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰي تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ، تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ تُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَ اَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَ يُدْخِلْكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ وَ مَسٰكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنّٰتِ عَدْنٍ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ، وَ اُخْرٰي تُحِبُّوْنَهَا نَصْرٌ مِّنَ اللهِ وَ فَتْحٌ قَرِيْبٌ وَ بَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তি থেকে রক্ষা করবে? (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটা তোমাদের পক্ষে শ্রেয়- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। এর ফলে আল্লাহ তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন উদ্যানে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে এবং এমন উৎকৃষ্ট বাসগৃহে, যা স্থায়ী জান্নাতে অবস্থিত। এটাই মহা সাফল্য। আর তোমাদেরকে দান করবেন তোমাদের পছন্দনীয় আরও একটি জিনিস, (তা হল) আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়!’ (সুরা সফ: ১০-১৩)

তাই জালেমের প্রতিরোধ করতে হবে সকল মুসলিম মিলে। এটাই কোরআন ও হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনা। এ দায়িত্বে উদ্বুদ্ধ করে মহানবী (স.) বলেন- الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُه بَعْضًا ‘মুমিনগণ পরস্পরে দেয়ালের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তি জোগায়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৫)

আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উদ্দেশে বিভিন্ন আয়াতে বলেছেন যে, তোমরা সাহস হারিও না। তোমরা শুধু চেষ্টা করে যাবে। মূল কাজটি আল্লাহই করবেন। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে- وَ مَا رَمَيْتَ اِذْ رَمَيْتَ وَ لٰكِنَّ اللهَ رَمٰي ‘(হে নবী!) তুমি যখন নিক্ষেপ করেছিলে, তখন তা তুমি নিক্ষেপ করনি; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন।’ (সুরা আনফাল: ১৭)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- وَ لَا تَهِنُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ ‘(হে মুসলিমগণ!) তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না। তোমরা প্রকৃত মুমিন হলে তোমরাই বিজয়ী হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৯)

আরেক আয়াতে জালেম ও ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধে মুমিনদের সাহস দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলছেন- قَاتِلُوْهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللهُ بِاَيْدِيْكُمْ وَ يُخْزِهِمْ وَ يَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَ يَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِيْنَ ‘তাদের সাথে যুদ্ধ কর, যাতে আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দান করেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করেন এবং মুমিনদের অন্তর জুড়িয়ে দেন ‘ (সুরা তাওবা: ১৪)

এমনকি সংখ্যায় কম হলেও সমস্যা নেই। শুধু প্রয়োজন আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা রেখে জালেমের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ইরশাদ হয়েছে- كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيْرَةًۢ بِاِذْنِ اللهِ وَ اللهُ مَعَ الصّٰبِرِيْنَ ‘এমন কত ছোট দলই না রয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের ওপর জয়যুক্ত হয়েছে! আর আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন, যারা সবরের পরিচয় দেয়।’ (সুরা বাকারা: ২৪৯)

সুতরাং আল্লাহ তাআলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি যাদের প্রতি রয়েছে, তারা কখনও ভীত হতে পারে না, পরাজিতও হতে পারে না। কেননা আল্লাহ তাআলার সাহায্য যখন শুরু হয়, তখন কাফেরদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেওয়া দুর্গও ধসে পড়ে। এরকমই এক ঘটনা বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা বলছেন- مَا ظَنَنْتُمْ اَنْ يَّخْرُجُوْا وَ ظَنُّوْۤا اَنَّهُمْ مَّانِعَتُهُمْ حُصُوْنُهُمْ مِّنَ اللهِ فَاَتٰىهُمُ اللهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوْا وَ قَذَفَ فِيْ قُلُوْبِهِمُ الرُّعْبَ ‘(হে মুসলিমগণ!) তোমরা কল্পনাও করনি, তারা বের হয়ে যাবে। তারাও মনে করেছিল, তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহ তাদের কাছে এমন দিক থেকে এলেন, যা তারা ধারণাও করতে পারেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন।.’ (সুরা হাশর: ২)

আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করা কুফুরি ও কঠিন গুনাহের কাজ। তাই মুমিনদের জন্য আবশ্যক হলো- জালেমদের হাত চেপে ধরা। পাশাপাশি এই প্রার্থনা করবে যে-رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَي الْقَوْمِ الْكٰفِرِيْنَ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর সবরের গুণ ঢেলে দাও এবং আমাদেরকে অবিচল-পদ রাখ, আর কাফির সম্প্রদায়ের ওপর আমাদেরকে সাহায্য ও বিজয় দান কর।’ (সুরা বাকারা: ২৫০)

এই দোয়াটিও করুন- رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ اِنْ نَّسِيْنَاۤ اَوْ اَخْطَاْنَا رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَيْنَاۤ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهٗ عَلَي الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهٖ وَ اعْفُ عَنَّا وَ اغْفِرْ لَنَا وَ ارْحَمْنَا اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْصُرْنَا عَلَي الْقَوْمِ الْكٰفِرِيْنَ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দ্বারা যদি কোনও ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় তবে সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি সেই রকমের দায়িত্বভার অর্পণ করো না, যেমন তা অর্পণ করেছিলে আমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর এমন ভার চাপিয়ো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের (ত্রুটিসমূহ) মার্জনা কর, আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের অভিভাবক ও সাহায্যকারী। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।’ (সুরা বাকারা: ২৮৬)

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন

Scroll to Top