চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ও তার ছেলে সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ ফারাজ করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগগুলোতে রয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়ানো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, এবাদতখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, নগদ অর্থ, প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ও সম্পদ লুট, অগ্নিসংযোগ, হত্যার চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে রাউজান থানায় মামলাটি করা হয়।
সোমবার (২৬ আগস্ট) মামলাটি দায়ের করেন রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের এয়াসিন নগরের বাসিন্দা এবং ত্বরিকত ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন মুনিরিয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের ২০৪ নম্বর ফকির টিলা শাখার সহসভাপতি মো. জোহেল উদ্দিন। এ নিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪টি।
মামলায় এই বাবা ছেলে ছাড়াও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, পৌরসভা মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, পৌর প্যানেল মেয়র বশির উদ্দিন খান, পৌর কাউন্সিলর কাজী ইকবালসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ৬ টার পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এজাহারনামীয় আসামি সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল ও ফারাজ করিম চৌধুরীর নির্দেশে বাকি আসামিসহ ২০-৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ত্রাসের সৃষ্টি করে। এ সময় তারা ধারালো কিরিচ, ছুরি, রামদা, হকিস্টিক, ধারালো দা, লোহার রড, হাতুড়ি, রাম-দা, মাস্তুল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বুলডোজারসহ ঘটনাস্থলে অর্থাৎ মুনিরীয়া যুব তাবলিগ কমিটি বাংলাদেশের ২০৪ নং ফকিরটিলা শাখা (এবাদত খানা)-র সামনে গিয়ে শক্তির মহড়া প্রদর্শন করে। আসামিরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গালিগালাজ করে শাখা কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অনধিকার প্রবেশ করে শোর চিৎকার করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। লোহার রড দিয়ে শাখার ডিজিটাল সাইনবোর্ড দরজা, জানালা ও গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। লোহার রড, হকিস্টিক, হাতুড়ি, রাম-দা, মাস্তুল দ্বারা এবাদতখানার ১ (এক) তলা ভাঙ্গা শুরু করে। পরে বুলডোজার দিয়ে শাখা কার্যালয় (এবাদত খানা)’র একতলা ভবন এবং ওই এবাদত খানাস্থ ৪টি ভাড়া দোকান ফার্মেসি, মুরগির দোকান, স্টেশনারি দোকান, চায়ের দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
এ সময় তারা শাখার বড় স্ট্যান্ড ফ্যান, কাঠের আলমারি অন্যান্য দামি সামগ্রীসহ লোহার লড, ইট, দোকানের মালামালসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার লুট করে নেয়। যাওয়ার সময় এবাদত খানা ও কার্যালয়ের ভেতরে গানপাউডার ছিটিয়ে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফলে শাখার কার্যালয়ে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র, কাগজপত্র বিশেষ করে পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এবাদতখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ পুরো কার্যালয়টি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০লাখ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী মো. জোহেল উদ্দিন জানান, বর্তমানে কার্যালয়টি জরাজীর্ণভাবে পড়ে আছে। ওই ঘটনার বিষয়ে তৎকালীন সময়ে স্থানীয় প্রশাসন হতে কোন প্রকার সহযোগিতা না পাওয়ায় এবং ১নং আসামি ওই এলাকার তৎকালীন ক্ষমতাসীন সংসদ সদস্য, ২নং আসামি ওই রাউজানের তৎকালীন পৌরসভার মেয়র ও ৩নং আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারে আমি বাদীকে সহ মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। দীর্ঘদিন ধরে নিজ এলাকায় অবস্থান করতে না পারায় এবং রাজনৈতিক হয়রানির স্বীকার হওয়ায় এজাহার দায়ের করিতে বিলম্ব হয়।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে আওয়ামী সরকার পতনের পর গত ২৩ আগস্ট রাউজান থানায় রাউজানে একছত্র আধিপত্যে বিস্তারকারী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ ৪৩জনের বিরুদ্ধে প্রথম বারের মামলা দায়ের হয়। মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের ১০৩ নম্বর দলইনগর-নোয়াজিষপুর শাখা (এবাদত খানা) ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, এবাদত খানায় অবস্থানরত সদস্যদের হত্যার চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন উক্ত শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন।
এ ছাড়াও গত ১৯ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক সংসদ ফজলে করিম চৌধুরীসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেন পশ্চিম গুজরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজদৌল্লাহ। এবং ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই সংসদ সদস্য সহ ২৩ জনকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে আরেকটি মামলা হয় (মামলা নং-১৬/২০২৪)।
চাটগাঁ নিউজ /এআইকে