চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদসহ দুইজনকে সীমান্ত পার করা দুই আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম এ আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) তাদের আটকের কথা জানায় বিজিবি।
বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, ডিবি পুলিশের মতিঝিল আঞ্চলিক টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, হাদিকে গুলি করা এজাহারনামীয় আসামি ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা অবৈধভাবে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায় মর্মে গোপনসূত্রে জানা যায়। সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম এবং তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামারা আসামিকে অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগীতা করেছে বলে সাক্ষ্য-প্রমান ও প্রযুক্তি সহযোগিতায় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সিবিয়ন দিউ হালুয়াঘাট ও ধোবাউরা উপজেলার প্রাক্তন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জুয়েল আড়েংয়ের ভাগ্নে। তিনি আগে থেকেই হালুয়াঘট, ধুবাউরা ও শেরপুর এলাকায় মানুষ এবং অবৈধ মালামাল পারাপারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ চাঞ্চল্যকর এ মামলার এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা কাদের পরিকল্পনা ও পরামর্শে সীমান্ত পার করে দিয়েছে জানা প্রয়োজন। তাদের সহযোগিদের সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জেনে আইনের আওতায় আনা যাবে। মামলার পরিকল্পনাকারী ও অন্যান্য জড়িতদের শনাক্তকরণ, হত্যার চেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার, ঘটনার পূর্বপরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও মদদ দাতাদের চিহ্নিতপূর্বক গ্রেপ্তারের জন্য তাদের সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তখন বিচারক তাদের কোনো বক্তব্য আছে কি না জানতে চান।
তখন আসামি সিবিয়ন দিউ বলেন, ‘ফিলিপের সাথে আমার আগে থেকে পরিচয়। তাকে আগে থেকেই চিনি। একটা নিউজে ফিলিপের নাম আসে। তাকে ফোন দিয়ে বললাম আপনার নাম (হাদি হত্যাচেষ্টায়) আসছে। দুইটা লোক পার করেছে বলে জানায়।
ফিলিপ কোথায় আছে, বিচারকের এমন প্রশ্নে সিবিয়ন দিউ বলেন,‘না, জানি না। ঘটনার বিষয়েও কিছু জানি না।’
আর আসামি সঞ্জয় চিসিম বলেন,‘ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না। ফিলিপের সাথে আমার কথা হয়। ঘটনার দিন রাতে ফিলিপ ফোন দিয়ে আমাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। পরে ফোন দিলে জানায় কাজ হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞাসা করি, কি কাজ। পরে নিউজ দেখে বুঝেছি, তারা আমাদের ওখান দিয়ে গেছে।’
এরপর আদালত দুইজনের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এ মামলায় বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির এবং মা হাসি বেগম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। একই দিন ফয়সালকে গাড়ি ভাড়া দেওয়া ব্যবসায়ী মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জলকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত মঙ্গলবার ফয়সালের সহযোগী কবিরের সাত দিন, গত সোমবার ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু এবং ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমার পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত।
এর আগের দিন গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) গ্রেপ্তার হওয়া মোটরসাইকেল মালিক মো. আব্দুল হান্নানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে গত রোববার রাতে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলাটি করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়।
গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’ বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন






