ফটিকছড়িতে ঘরের কাছেই মিলছে ন্যায়বিচার

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ফটিকছড়ি উপজেলার গ্রাম আদালতের কার্যক্রম দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছোটখাটো দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এখন আর গ্রামবাসীকে দূরের আদালতে ছুটতে হচ্ছে না— ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিষ্ঠিত গ্রাম আদালতেই মিলছে সমাধান।

আইন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা মূল্যমানের দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধ গ্রাম আদালতের এখতিয়ারে পড়ে। স্ত্রী কর্তৃক বকেয়া ভরণ-পোষণ আদায় থেকে শুরু করে প্রতিবেশীদের মধ্যে ক্ষুদ্র বিরোধ— সবই দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে এখানে।

ফটিকছড়ির বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবরা জানান, গ্রাম আদালতে মামলা হলে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষই স্বাধীনভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন। সঠিক বিচার পাওয়ার সুযোগ থাকায় বর্তমানে মানুষ ক্রমেই গ্রাম আদালতের প্রতি আস্থা রাখছেন। মামলা পরিচালনায় হয়রানির আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে উপজেলার গ্রাম আদালতে মামলা হয়েছে ১৯০টি। এর মধ্যে ৯৩টি নিষ্পত্তি হয়েছে, আর বাকি রয়েছে ৯৭টি। উচ্চ আদালত থেকে প্রেরিত মামলার সংখ্যা ২৬টি এবং সরাসরি দায়ের হওয়া মামলা ৪৫টি। এ সময়ে ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

ফটিকছড়ি গ্রাম আদালত উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম জানান, গ্রাম আদালতে মামলা হলে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, ফলে সময়, শ্রম ও টাকা সবই বেঁচে যায়। ফৌজদারি মামলার ফি মাত্র ১০ টাকা এবং দেওয়ানী মামলার ফি ২০ টাকা হওয়ায় খরচও তুলনামূলকভাবে কম। তার ভাষায়, “গ্রাম আদালতে কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন হয় না। আবেদনকারী ও প্রতিবাদী নিজেরাই মতামত উপস্থাপন করতে পারেন। সঠিক নথি সংরক্ষণ ও দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে গ্রাম আদালত হয়ে উঠেছে ন্যায়বিচারের একটি বিশ্বস্ত স্থান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে গ্রাম আদালত কার্যকর রয়েছে। এখতিয়ারভুক্ত নির্দিষ্ট আর্থিক সীমার মধ্যে যেকোনো বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি। গ্রামীণ মানুষ অনেক সময় আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় দূরের আদালতে গিয়ে মামলা পরিচালনা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। সঠিকভাবে গ্রাম আদালত পরিচালিত হলে এসব মামলা উচ্চ আদালতে গড়াবে না, ফলে মামলা জটও কমবে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ মীমাংসা হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমায় এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে সহজ করে তোলে।

চাটগাঁ নিউজ/আনোয়ার/এমকেএন

Scroll to Top