ফটিকছড়িতে ওষুধ সংকটে বিপর্যস্ত কমিউনিটি ক্লিনিক

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় উপজেলা ফটিকছড়িতে স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) চরম সংকটে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওষুধের স্বল্পতা, জনবল ঘাটতি ও তদারকির অভাবে এসব ক্লিনিকে সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

আর এসব ক্লিনিকে কর্মরত ৪৬ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) বিগত ১০ মাস ধরে বেতন না পেয়ে চরম হতাশা আর মানবেতর জীবনের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রতিদিন শতাধিক রোগী ফিরছেন খালি হাতে।

প্রতিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। অথচ বর্তমানে ২৭ ধরনের ওষুধের জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২২টি ওষুধ, তাও মাত্র ১ কার্টন করে দুই মাসের জন্য। ফলে অধিকাংশ সময়েই রোগীদের সেবা না দিয়েই ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন সিএইচসিপিরা।

বর্ষাকাল ঘিরে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ, হাঁপানি ও শিশুদের জ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও সেই রোগগুলোর প্রয়োজনীয় ওষুধ অনুপস্থিত। বিশেষ করে উত্তর ফটিকছড়ির দুর্গম এলাকাগুলোর রোগীদের জন্য এই সংকট জীবনঘাতী হয়ে উঠছে। দুর্গম এলাকায় ভরসা শুধু এই ক্লিনিকগুলো।

উপজেলা সদর থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরের বাগান বাজার, দাঁতমারা, ভূজপুর, নারায়ণহাটসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষদের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া কষ্টসাধ্য। ফলে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য একমাত্র ভরসা স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু সেখানে ওষুধ না থাকায় চরম বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বেতনহীন সিএইচসিপিরা ভেঙে পড়ছেন মানসিকভাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিএইচসিপি বলেন, রোগীদের সেবা দিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত। কিন্তু ওষুধের অভাব আর দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি। পরিবার চালানো এখন কঠিন হয়ে গেছে।

৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে অন্তত ১৪-১৫টির ভবন এতটাই জরাজীর্ণ, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। পানুয়া, ফকিরাচান, উত্তর ধুরং, জাফতনগরসহ বেশ কয়েকটি ক্লিনিকের ভবন ইতোমধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। জরাজীর্ণ ভবন, ঝুঁকির মুখে চিকিৎসা।

ওষুধ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌনম বড়ুয়া বলেন, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কেন্দ্র সাথে কথা বলেছি, তারা ওষুধ কেনার প্রক্রিয়ায় আছে। এটি কেন্দ্রীয়ভাবে হচ্ছে, তাই সময় লাগছে। সারা দেশের ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য একসঙ্গে ওষুধ কেনা হচ্ছে। এতে ৩-৪ মাস সময় লেগে যেতে পারে।

সিএইচসিপিদের বেতন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জনের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। বাকিরাও প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আমরা দ্রুত এ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

দেশের বৃহত্তম উপজেলার প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ সরবরাহ, বকেয়া বেতন পরিশোধ, নিয়মিত তদারকি ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

চাটগাঁ নিউজ/আনোয়ার/এমকেএন

Scroll to Top