প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চসিক-বৈষম্য বিরোধী মুখোমুখি অবস্থানে

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রতিরোধের মুখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধক্ষের পদত্যাগের পর চসিক মেয়র মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সেটিকে চসিকের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন। আবার মেয়রের এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিজেদের পছন্দমত উপাচার্য,উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এমন অবস্থায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ আসলে কার হাতে যাচ্ছে-তা নিয়েই জনমনে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর জিইসি মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের’ ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য আছে। ভিসি ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘসময় চলতে পারে, কারণ সেটা সরাসরি সরকার পরিচালনা করে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলে না। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটা ক্যাম্পাস আছে। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন ভাতাসহ নানাবিধ খরচের বিষয় আছে যাতে ভিসি এবং ট্রেজারারের স্বাক্ষরের প্রয়োজন। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয় যদি বন্ধ হয়ে যায় অবশ্যই এর দায়ভার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। এজন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভিসি, প্রোভিসি, ট্রেজারার নিয়োগ দিতে হবে। তবে আগের ট্রাস্টি বোর্ড থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে তা মানা হবে না।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্ত বড়ুয়া বলেন, আমাদের একটা প্রতিনিধি টিম ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের প্রস্তাব দেওয়া হয় একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও জুলাই স্পিরিট ধারণ করে এমন কাউকে আমাদের ভিসি, প্রো-ভিসি বা ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেযার জন্য। কিন্তু প্রায় ১২ দিনেও এ সংক্রান্ত কোনো আপডেট পাইনি। আমরা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের একটা লিস্ট আবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের এ বিষয়ের একটা অগ্রগতি জানাতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে গত ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমাবজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, উপ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা এবং কোষাধ্যক্ষ তৌফিক সাঈদ পদত্যাগ করেছিলেন।

এমন অবস্থায় ১০ ডিসেম্বর টাইগারপাস এলাকায় চসিক কার্যালয়ে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালনার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন। এজন্য তিনি উপাচার্য পদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোন শিক্ষাবিদকে খোঁজা হচ্ছে বলেও তথ্যও দেন মেয়র।

মেয়র বলেন, মাফিয়া চক্রের কাছে কোন ইউনিভার্সিটি বন্ধক দেয়া যাবে না। ভবিষ্যতে যাতে কেউ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পুনর্দখল করতে না পারে সে বিষয়ে আইনি কাঠামো গড়ে তোলা হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টাকায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৩ সালে চসিকের নিজস্ব ফান্ডের ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূমি কেনা হয়েছে।

তবে দুই পক্ষই চাইছে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের পছন্দসই পরিচালনা। দুই পক্ষই চায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত সময়ে নতুন ভাবে যাত্রা শুরু করুক। কার্যক্রম শুরু হোক। তবে সচেতন মহল মনে করছে, শিল আর নোড়ার ঘষাঘষিতে পরে শেষ পর্যন্ত যেন মরিচের সর্বনাাশ না হয়। নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে, দ্রুত সময়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর তৎপরতা চালাতে গিয়ে যেন আরো সময় বিলম্বের বিড়ম্বনার শিকার না হয় প্রতিষ্ঠানটি।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি 

Scroll to Top