নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পত্তি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় লালদিঘীর নতুন চসিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে নব্য সিটি মেয়র ডা. শাহাদাতের প্রথম সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে তিনি এই প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব সম্পত্তি। ক্ষমতায় থাকলে আমরা অনেক কিছু করে ফেরি। মানুষের সম্পত্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের নামে করে ফেলি। এটা বড় প্রবলেম। আমরা যারা রাজনীতি করি, আমরা শুধু মুখে বড় বড় কথা বলি। কিন্তু আমাদের ঘরে অনেক কিছুই পাওয়া যায় যখন ক্ষমতা চলে যায়। এই প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিকে বিগত সময়ে বেদখল করে ফেলা হয়েছে। এটা আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আমার উদ্ধার করতে হবে। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, ইনশাল্লাহ।
চসিক সূত্রে জানা যায়, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি চেয়ে ২০০১ সালের ৫ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে চসিক। ২০০২ সালের ২১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি পায় চসিক। নগরীর প্রবর্তক মোড়ে এবং ওয়াসার মোড় সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের জমিতে তিনটি ভবন নির্মাণ করা হয়। তার মেয়াদেই ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি। নিয়ম অনুযায়ী মেয়রই হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। সে অনুযায়ী ২০১০ সাল পর্যন্ত আট বছর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মহিউদ্দিন।
২০১০ সালে বিএনপির পক্ষ থেকে মোহাম্মদ মনজুর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদও হারান মহিউদ্দিন চৌধুরী। তবে মেয়র মনজুর আলম সম্মান দেখিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টির সদস্য নির্বাচিত করেন। কিন্তু মনজুর আলমের মেয়াদেই মহিউদ্দিন চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের বলে দাবি করে বসেন।
তারপর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র হলে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে বিরোধ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক চিঠির মাধ্যমে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সম্বোধন করে।
তবে ইউজিসির এমন সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে মহিউদ্দিনের অংশগ্রহণে কোনও ধরনের বাধা না দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত । ২০১৬ সালের ১২ জুন দেওয়ানি আদালতে প্রতিকার চাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পিটিশনটি খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত।
এই রুলের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবার লিভ টু আপিল পিটিশন করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্ত শুনানিতে তিনি হাজির না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি লিভ টু আপিলটি খারিজ করে দেন আদালত। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মহিউদ্দিন।
২০১৯ সালের নতুন সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মহিউদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েই নওফেল প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে নিজের পছন্দমতো সদস্য অন্তর্ভুক্ত করেন। নওফেল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘চৌধুরী পরিবারের সম্পত্তি’ হিসেবে দখলে নিতে দলের হাইকমান্ডেও নানামুখী তদবির শুরু করেন।
এক পর্যায়ে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব ছাড়তে বাধ্য হন আ জ ম নাছির। এর মধ্য দিয়ে নিজের জমি ও গাঁটের টাকা খরচ করে প্রতিষ্ঠা করা বিশ্ববিদ্যালয়টি হাতছাড়া হয়ে যায় চসিকের। বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নওফেল।
তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব ফেরাতে আবার সক্রিয় হয় চসিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব এবং মালিকানা ফেরত চেয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/জেএইচ