প্রসূতি মায়ের রোজা রাখার বিধান

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ রোজা। মহান আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।

কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে তিনি রোজা রাখার ব্যাপারে সাময়িক শিথিলতাও দিয়েছেন। যেমন—মুসাফির, অসুস্থ, অক্ষম, মাজুর ইত্যাদি। এর ধারাবাহিকতায় আমাদের মনে সাধারণ একটি প্রশ্ন জাগে যে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মায়েদের রোজার বিধান কী হবে? তাদেরও কি মাজুর ধরার কোনো সুযোগ আছে? এর উত্তর হলো, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মায়েদের রমজানের রোজা রাখার ক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে।
প্রথম অবস্থা : গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণীর নিজের বা বাচ্চার কোনো ক্ষতি হবে না। এ অবস্থায় তাদের জন্য রমজানের রোজা রাখা বাধ্যতামূলক।

দ্বিতীয় অবস্থা : রোজা রাখলে তাদের অথবা বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা হয়, যেমন—মারা যাওয়া অথবা অঙ্গহানি হওয়ার আশঙ্কা। এ অবস্থায় তাদের রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে ক্ষতির আশঙ্কা চলে গেলে রোজা কাজা করতে হবে। দ্বিতীয় অবস্থায় দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী রোজা ছেড়ে দিলে তা কাজা করতে হবে না, শুধু ফিদিয়া দিলে হয়ে যাবে।

বেশির ভাগ আলেমের মতে এ কথা সঠিক নয়। বেশির ভাগ উলামায়ে কেরামের মত হলো, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী যদি রমজান মাসে কষ্টের কারণে রোজা ছেড়ে দেন, পরবর্তী সময়ে তিনি রোজা কাজা করে নেবেন। এ মতামতটি বিশুদ্ধ এবং সঠিক।

এ কথা দলিলের আলোকে বোঝার জন্য আমাদের জানতে হবে, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মায়েরা কোন ধরনের রোগীর অন্তর্ভুক্ত?

হানাফি মাজহাব মতে তারা অতিশয় বৃদ্ধ নারীর মতো নয়। কেননা এ ব্যাপারে শরিয়তের কোনো দলিল বিদ্যমান নেই এবং বাস্তবেও তারা বৃদ্ধ নারীর মতো নন যে, কখনো রোজা রাখতে পারবেন না বরং সাময়িক তারা রোজা রাখতে অক্ষম হলেও পরবর্তী সময়ে রোজা রাখতে সক্ষম হবেন।

এ বিষয়ে ইবনে মাজাহর বিশুদ্ধ সনদে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

বিশ্বনবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোজার বিধান শিথিল করেছেন এবং নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণীর জন্যও রোজার বিধান শিথিল করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৬১ তিরমিজি : ১/১৫২)

হাদিসের শব্দের দিকে চিন্তা করলে বোঝা যায়, রাসুল (সা.) ‘ওয়াও’ হরফে আতফের মাধ্যমে মুসাফির, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলার রোজার বিধান বর্ণনা করেছেন, যার দ্বারা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, এই দুই শ্রেণির নারী রোজার ব্যাপারে মুসাফিরের ন্যায়। যেভাবে মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় কষ্ট হলে রোজা ভাঙার অনুমতি আছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা কাজা করে নিতে হবে। ঠিক তদ্রুপ গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী নারীর কষ্ট হলে রমজানের রোজা না রাখার সযোগ আছে। তবে পরবর্তী সময়ে তা কাজা করতে হবে।

মুসাফির ও অসুস্থের রোজার শিথিলতার ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

অর্থাৎ এ আয়াতে অসুস্থ ব্যক্তি এবং মুসাফিরকে প্রয়োজনে রোজা না রাখার শিথিলতা দেওয়া হয়েছে। তবে তারা যৌক্তিক কারণে যে কয়টি রোজা রাখতে পারবে না, পরবর্তী সময়ে সেগুলো কাজা করতে হবে। (তাফসিরে আহসানুল বায়ান)

সুরা বাকারার এই আয়াত এবং ইবনে মাজাহর উল্লিখিত হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মায়েরাও (বিশেষ অবস্থায় বিধানের দিক থেকে) মুসাফির বা অসুস্থ ব্যক্তির মতো। তাই নিজের ও সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা হলে অভিজ্ঞ ও মুত্তাকি চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা না রাখার অনুমতি আছে, তবে পরবর্তী সময়ে কাজা করতেই হবে।

এ ব্যাপারে ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়ায় উল্লেখ রয়েছে, ‘যদি গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারিণী নিজের ওপর অথবা সন্তানের ওপর রোজা রাখার ভয় করে তখন তাদের জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ আছে এবং পরবর্তী সময়ে তারা তা কাজা করে নেবে। ’ (ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া, রোজার অধ্যায় ০৩/৪০৪)। মুফতি আব্দুল আজিজের লেখা

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন

Scroll to Top